এনভিডিয়ার পর ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁল মাইক্রোসফট


প্রযুক্তি খাতে আবারও নজির গড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। গত বৃহস্পতিবার সংক্ষেপে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারমূল্যে পৌঁছায় কোম্পানিটি এর আগে কেবল এনভিডিয়া এ মাইলফলকে পৌঁছেছিল।
তবে দিন শেষে অবশ্য মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য কিছুটা কমে এসে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। একইদিনে প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটার শেয়ারমূল্য বেড়ে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মাইক্রোসফটের বেড়ে ৫ শতাংশ হয়। ফলে একদিনেই দুই কোম্পানির সম্মিলিত বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার বেশি, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ব্যাংক জেপিমরগ্যান চেজ অথবা বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্টের চেয়েও সাত গুণের বেশি।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, গত তিন মাসে তাদের আয় বেড়ে ৭৬ বিলিয়ন বা ৭৬০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সামনের তিন মাসেই তারা ৩০ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করবে। এই ব্যয়ের বেশির ভাগই যাবে ক্লাউড অবকাঠামো সম্প্রসারণে। এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের চাহিদা মেটাতে এই ক্লাউড অবকাঠামো সম্প্রসারণে নজর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটা জানিয়েছে, তাদের আয় ২২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ এখন মেটার বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০২৫ সালে তাদের মোট ব্যয় হবে ১১৪ থেকে ১১৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে, যার বেশির ভাগই ব্যয় হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বিশ্বব্যাপী ডেটা সেন্টার খাতে।
এই দুই কোম্পানির উত্থান মূলত এসেছে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আয়ের কারণে। এই আয়ের পেছনে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত এনভিডিয়ার শেয়ারমূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশ, মাইক্রোসফটের বেড়েছে ২৭ শতাংশ এবং মেটার শেয়ার বেড়েছে ৩২ শতাংশ।
অন্যদিকে, প্রযুক্তি খাতে পথপ্রদর্শক অ্যাপল চলতি বছর পিছিয়ে পড়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য কমেছে ১৮ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এআই খাতে মাইক্রোসফট বা ওপেনএআইয়ের মতো এগিয়ে না থাকায় অ্যাপল নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে।
গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটও এআই খাতে রয়েছে প্রতিযোগিতায়। তবে তাদের শেয়ারমূল্য চলতি বছর বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। অ্যালফাবেট বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম ক্লাউড সেবাদাতা, আমাজন ও মাইক্রোসফটের পরেই। তবে চ্যাটজিপিটির মতো এআই চ্যাটবটের প্রসারের কারণে গুগল সার্চ ব্যবহারে ধস নামছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।
গত এপ্রিলে গুগলের এক প্রতিদ্বন্দ্বী মামলার শুনানিতে অ্যাপলের এক নির্বাহী জানান, অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজারে ওই মাসেই প্রথমবারের মতো সাধারণ অনুসন্ধান কমেছে। যদিও গুগল বলছে, সার্চের ব্যবহার কমেনি, বরং সামগ্রিকভাবে তা বেড়ে চলেছে।
২০২৩ সালের শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব পাবলিক কোম্পানির সম্মিলিত বাজারমূল্য ছিল ১২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমানে কেবল অ্যাপল, অ্যালফাবেট, মেটা ও মাইক্রোসফটের সম্মিলিত বাজারমূল্য ১১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ইউরোপীয় অর্থনীতিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলা এক নজিরবিহীন বাস্তবতা।
তথ্যসূত্র: সিএনবিসি