সাবেক এমপির কাজের ৩ কোটি টাকা বাকি


সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চল তেকানীতে সাড়ে তিন কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চে। স্থানীয়দের দাবির পর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের মৌখিক নির্দেশে এ কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তানভীর শাকিল আত্মগোপনে চলে যান। তবে বাঁধ নির্মাণকাজে নিয়োজিত আটটি ড্রেজার (বালু উত্তোলনকারী যন্ত্র) ও তিনটি এক্সকাভেটরের (ভেকু) মালিক এবং দুই শতাধিক শ্রমিক তাঁদের মজুরি বাবদ পাওনা ৩ কোটি টাকা এখনো পাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর আগে যমুনায় একটি শাখানদী তৈরি হয়। এতে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া, তেকানী ও নিশ্চিতপুর এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে তেকানী ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বহমান সেই শাখা বন্ধ করার জন্য স্থানীয়রা তানভীর শাকিলের কাছে দাবি জানান। সে সময় তিনি কোনো সরকারি প্রকল্প গ্রহণ না করেই তেকানী খেয়া ঘাট থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে তেকানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একই ঘাটের পশ্চিম দিকে তেকানী চর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। পরে ২০২৪ সালের ১৯ মার্চ থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে তানভীর শাকিলের মৌখিক নির্দেশে এই মাটির বাঁধ নির্মাণকাজে আটটি ড্রেজার, তিনটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন।
এমপির নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়।
কাজ চলাকালে তানভীর শাকিলের তহবিল থেকে ৩৬ লাখ এবং জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে ৫০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়।
কিন্তু বাঁধ নির্মাণ শেষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির হিসাবে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এই অবস্থায় আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে তানভীর শাকিল, প্রকল্পের সভাপতি, সদস্যসচিব—সবাই আত্মগোপনে চলে যান। তাই বাকি টাকা এখনো পাননি বাঁধ নির্মাণে নিয়োজিত দুই শতাধিক শ্রমিক, ড্রেজার ও এক্সকাভেটরের মালিকেরা।
ড্রেজার মালিক জাহিদুল ইসলাম কুড়ান বলেন, ‘জয় এমপির নির্দেশে আটটি ড্রেজার দিয়ে বাঁধে বালু ফেলেছি। মজুরির ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এখনো পাইনি। এই টাকা না পেলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এমপিই তো পলাতক। টাকা দেবে কে?’
তানভীর শাকিলের প্রতিনিধি ও স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুস সালাম বিএসসি বলেন, ‘এমপি সাব বাঁধটি তদারকির দায়িত্ব দেন আমাকে। সে সময় ৮৬ লাখ টাকাও আমার হাতে দেন তিনি। সেই টাকা নির্মাণকাজে নিয়োজিতদের মাঝে বিতরণ করেছি। এখনো তারা মজুরির তিন কোটি টাকা পাবে।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি তেকানী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুনার রশিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মোবাইল নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
কাজীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকেরা আমাকে তাঁদের পাওনা টাকার বিষয়ে জানিয়েছেন। তারপরও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো মাধ্যমে বিশেষ কোনো বরাদ্দ আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।’