কলেজের ভবনে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান


প্রতিষ্ঠার পরের বছর থেকে (২০২২ সাল) একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তা নিজস্ব ক্যাম্পাসে নয়, কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ১০ তলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়। কথা ছিল নির্দিষ্ট সময় পর নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে যাবে, কিন্তু তা হয়নি। উল্টো কলেজে শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করতে তৈরি নতুন ভবনে ঢুকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এতে সংকট আরও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, গুরুদয়াল কলেজে এইচএসসি এবং ১৬টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। অপর দিকে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগে রয়েছেন প্রায় ৩৪৬ জন শিক্ষার্থী। চলতি বছরের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে প্রায় ৪৫০ জন।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ জুলাই থেকে গুরুদয়াল কলেজের ১০ তলা ভবনের তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভবনটি ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হলে ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর গুরুদয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পরবর্তী নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেয়। ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় গুরুদয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অবকাঠামোগত অসুবিধা হচ্ছে কি না, তাঁর সুস্পষ্ট মতামত জানতে চায়। গত ২২ জানুয়ারি কলেজটির একাডেমিক কাউন্সিলের ১২৫তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে কলেজের ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই মতামত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। এই চিঠির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম মুশতাকুর রহমান বলেন, ‘১০ তলা ভবনটি নির্মিত হওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম যে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, তা চলে যাবে। কিশোরগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এটা ভেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ১০ তলা ভবনে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা মেনে নিয়েছি। তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ইতিমধ্যে এই নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। তারা আমাদের কথা দিয়েছিল, ভাড়া নিয়ে চলে যাবে। সেটা কত দূর কী করতে পারছে, তা আমরা জানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুদয়াল সরকারি কলেজের একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বাধ্যবাধকতা থাকায় শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট রয়েছে। এ জন্য ১০ তলা ভবন করা হয়েছে। তবে সেই ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে সংকট আরও জটিল রূপ ধারণ করেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের এই ক্ষোভ সংগঠিত রূপ লাভ করে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কলেজের ১০ তলা ভবন ফেরত পাওয়ার দাবিতে অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে ভবনটি ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্রুততম সময়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ১৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ভূমি অধিগ্রহণসহ নিজস্ব ক্যাম্পাস দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান।
গুরুদয়াল কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের গণিত বিভাগের ছাত্র সাজ্জাদ আকুঞ্জি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এখানে থাকায় পর্যাপ্ত ক্লাসরুম পাচ্ছি না। গণিত বিভাগে দুটি ক্লাসরুম। যদি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হয়, তাহলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ থাকে। ১০ তলা ভবনটি থাকলে সেখানে সুবিধা পাওয়া যেত।’
কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. মাশরাফী মর্তুজা বলেন, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাবে এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। নিজস্ব অবকাঠামো না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল, প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জেলা সদরের বৌলাই ইউনিয়নের জামতলা ও মইশাখালী বিলের ১০৩ একর জমি চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটির নথি পরিকল্পনা কমিশনে জমা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভূমি অধিগ্রহণ করে এর উন্নয়ন, সীমানার দেয়াল ও মূল গেট নির্মাণ করার কথা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘সম্প্রতি ১০৩ একর ভূমির প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দাখিল করবেন প্রকল্প পরিচালক। সম্ভাব্যতা যাচাই হবে। তারপর কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দের মিটিং হবে। এরপর ৪ ধারা অনুযায়ী নোটিশ দেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দিলীপ কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য কার্যক্রম চলছে। আমরা ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি পেয়েছি। এখন ডিসি অফিসের কাজ। আমি যুদ্ধ করে ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি নিয়েছি। আশা করি, আমি থাকা অবস্থায় ভিজিবল হবে।’