ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে কোটি টাকার মালিক অনুজ আচার্য্য


পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিঠুন আচার্য্য অনুজ। একসময়ের অভাবী পরিবার থেকে উঠে আসা এই যুবক বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক বলে অভিযোগ উঠেছে। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা বা আয়ের উৎস ছাড়াই সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুজ আচার্য্য একসময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তাঁর বাবা প্রয়াত নারায়ণ আচার্য্য ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। পারিবারিক অভাবের কারণে একমাত্র বোনের বিয়েতে পিতাকে জমি বিক্রি করতে হয়েছিল। সেই অনুজই পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে একের পর এক পদে আসীন হন। ছিলেন পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতি এবং একপর্যায়ে পৌর কাউন্সিলরও নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর আয়-ব্যয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে বলছেন অনেকেই।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর থেকেই অনুজের অবস্থান পরিবর্তন হতে থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য, বাসস্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়, টেন্ডার বাণিজ্য এবং মাদক নিয়ন্ত্রণের মতো অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, একটি কিশোর গ্যাং তাঁর হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে।
একটি স্থানীয় সমবায় সমিতির পরিচালক কৃষ্ণ কান্ত দাস বলেন, ‘অনুজ আচার্য্য কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতেন না। একসময় ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে আমার সমিতিতে ৭০ লাখ টাকা জমা রাখেন। সেখান থেকে চার বছরে সুদে-আসলে তিনি নিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। পরে আবার ৯ লাখ টাকা জমা রেখে আরও ৮ লাখ টাকা সুদও তুলেছেন। এখন শেষের ৯ লাখ টাকা হঠাৎ একসঙ্গে চাইছেন। আমাদের সমিতির আর্থিক সংকট চলছে বলে সেটা দিতে পারিনি। এতে তিনি আমার ওপর হামলা চালান।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বরূপকাঠি পৌরসভার আচার্য্যপাড়ায় নিজের পুরোনো বসতঘর ভেঙে তিনতলা ফাউন্ডেশনের একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন অনুজ আচার্য্য। বাসায় বসানো হয়েছে দুই টনের এসি। বাড়ির সামনে রয়েছে একাধিক মোটরসাইকেল। স্থানীয় একটি সমবায় সমিতিতে তিনি প্রথম দফায় ৫০ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় ২০ লাখ টাকা জমা রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া একই এলাকায় তিনি ১৬ লাখ টাকায় একটি বসতবাড়ি ও আড়াই শতক জমি কেনেন। বোনের বিয়ের সময় বিক্রি করা জমি তিনি পরে ১২ লাখ টাকায় কিনে ফেরত আনেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠুন আচার্য্য অনুজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ও আত্মীয়দের নামে বর্তমানে ওই সমিতিতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা রয়েছে। অবৈধ কোনো ইনকাম নেই। আমি নিয়মিত আয়কর দেই—৫৫ লাখ টাকার সম্পদ, ২০ ভরি স্বর্ণ এবং দুটি মোটরসাইকেল আমার আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে।’
তবে তার দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাঁর মেয়ের নামে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্সটি কোন সালে ইস্যু হয়েছে এবং কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কোথায় কাজ করছেন—এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব তিনি দিতে পারেননি।