শিরোনাম

দুটি নাম ব্যবহার করতেন পলাতক জানে আলম

দুটি নাম ব্যবহার করতেন পলাতক জানে আলম

রাজধানীর গুলশানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পর পালিয়ে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু। কাজী গৌরব নামেও পরিচয় দিতেন তিনি। গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় হওয়া মামলায় ২ নম্বর আসামি তিনি। রাজধানীর ওয়ারী থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. তালেবুর রহমান।

গত ১৭ জুলাই গুলশানে শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা আদায় করতে গেলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব এবং এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর।

পরে শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিজ নিজ সংগঠন থেকে রিয়াদ, ইব্রাহিম, সাকাদাউন ও সাদমানকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় সবশেষ গ্রেপ্তার হলেন জানে আলম অপু। তিনিও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে বহিষ্কৃত।

আজ সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে অপু পলাতক ছিলেন। তিনি জানে আলম অপু ও কাজী গৌরব—এই দুই নাম ব্যবহার করতেন। গুলশানের ঘটনায় এ নিয়ে মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, ‘এই “সমন্বয়কদের” পেছনে কেউ আছে কি না, কোনো রাজনৈতিক দল জড়িত কি না—তা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো যাবে।’

গ্রেপ্তার রিয়াদ, সাকাদাউন, সাদমান ও ইব্রাহিম বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।

রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিয়াদের পশ্চিম রাজাবাজারের একটি বাসা থেকে সোয়া দুই কোটি টাকার চারটি চেক উদ্ধার করে পুলিশ। ‘ট্রেড জোন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া এসব চেকের দুটি এক কোটি টাকা করে, একটি ১০ লাখ ও অপরটি ১৫ লাখ টাকার। সবগুলো চেকই প্রাপকের নাম ও তারিখবিহীন।

এ ছাড়া বাড্ডায় রিয়াদের ভাড়া করা আরেক বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, এসব অর্থ শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে আদায় করা ১০ লাখ টাকার অংশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব টাকার কথা স্বীকার করেন রিয়াদ।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড্ডার তিন কক্ষের ওই বাসার একটিতে থাকতেন রিয়াদ। অন্য রুমগুলোতে চার-পাঁচজন করে ভাড়াটিয়া থাকতেন। রিয়াদের রুমে দামি আসবাব ও আধুনিক সামগ্রী ছিল। তাঁর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসার চিত্র এমনটা ছিল না। রিয়াদের দামি পোশাক ও জীবনযাপন দেখে পুলিশ তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁর বাড্ডার বাসার খবর পাওয়া যায়।

ওসি হাফিজুর রহমান জানান, চাঁদা হিসেবে আদায় করা ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা নিজের কাছে রেখে দেন রিয়াদ। বাকি টাকা ভাগ করে নেন অপু ও অন্য সহযোগীরা।

ওসির ভাষ্য, রিয়াদ ও অপু মিলে একটি দল গঠন করে, যার কাজ জমি দখল, মব সন্ত্রাসের ভয় দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। এসবই ছিল তাঁদের মূল পেশা।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button