ভবিষ্যৎ সরকারকে ‘জুলাই সনদ’ মেনেই চলতে হবে: জামায়াত


জামায়াতে ইসলামী বলেছে, অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে এবং এই সনদ মেনেই বর্তমান ও ভবিষ্যতের সরকারকে দেশ পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায়, আবারও ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।
আজ শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে জামায়াতের নেতারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন’—এই তিনটি ছাড়া তাঁরা কোনো ক্ষমতার পালাবদল দেখতে চান না। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘সংস্কার ও ঐক্যের দাবিগুলোকে আইনি কাঠামোতে আনার ক্ষেত্রে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।’ বক্তারা ফ্যাসিবাদ তাড়ানো ও নতুন ফ্যাসিবাদীদের প্রতিরোধ করার ওপর জোর দেন।
জামায়াত নেতারা আরও বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ রয়েছে। এসব ঠিক না করে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই নির্বাচন দিতে হবে।
সেমিনারে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে সভাপতিত্ব করেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি ড. এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, গুমের শিকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের কোনো ক্ষমা নেই।’ তিনি শুধু ‘খুনি হাসিনা’ নয়, বরং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রধান বিচারপতি, প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সহকারী সেক্রেটারি ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘ট্যাগের রাজনীতি’ আবার শুরু হয়েছে। যারা নতুন করে ট্যাগ দিচ্ছেন, স্বৈরাচারের মতো তাদেরও একই পরিণতি হবে।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, সংস্কার ও বিচার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তিনি অভিযোগ করেন, সামনে, ডানে, বামে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের রাজনীতি শুরু হয়েছে, যা করে শেখ হাসিনা টিকে থাকতে পারেননি। ছাত্র-জনতা দখলদারিত্বের রাজনীতিকে সফল হতে দেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘একাত্তর ও চব্বিশের স্বাধীনতার পরেও আরেকটি স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ মানুষের গোলামি করলে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে না।’ কল্যাণকর ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় সংসদে মানুষের তৈরি আইনের পরিবর্তে কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি।
সেমিনারে ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি এবং আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়।