শিরোনাম

উপকারভোগীদের ভাতার চাল ছিনিয়ে নিলেন বিএনপির কর্মীরা

উপকারভোগীদের ভাতার চাল ছিনিয়ে নিলেন বিএনপির কর্মীরা

যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নে সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির (ভিডব্লিউভি) আওতায় হতদরিদ্র নারীদের মধ্যে বিতরণ করা চাল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান নেদার লোকজনের বিরুদ্ধে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ভুক্তভোগীরা ছয় বস্তা চাল ফেরত পেয়েছেন। তবে অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান নেদার দাবি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে, কেউ তার কাছের লোক নয়, কেবল বিএনপি পরিবারের সদস্য। তাদের দলে কোনো পদও নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রামপুর ধলদা গ্রামের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভিডব্লিউভি তালিকাভুক্ত প্রত্যেক নারী সদস্যকে উলাশী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিন বস্তা চাল দেওয়া হয়। নারী সদস্যরা চাল ভ্যানে করে নিজ নিজ বাড়িতে নেওয়ার পথে ধলদা মোড়ে ভ্যান থামিয়ে জোরপূর্বক চাল ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে ধলদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ইয়ানুর, রাজ্জাক বিশ্বাসের ছেলে মিজানুর বিশ্বাস, সুরত আলীর ছেলে মশিয়ার ও আতিয়ার বিশ্বাসের ছেলে রফিকুলের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানান, তারা সবাই শার্শা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আমিনুর রহমান নেদারের ঘনিষ্ঠ। ৫ আগস্টের পর এই নেতার বিরুদ্ধে সালিস বিচারের নামে টাকা আদায় করারও অভিযোগ হয়েছে।

ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের তিন বস্তা করে চাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ধলদা মোড়ে পৌঁছালে তারা পথ আটকে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়ে এক বস্তা করে চাল দিয়ে আসতে হয়। কেউ কিছু বললে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। আরেক নারী বলেন, সরকার যে সহায়তা দিচ্ছে, সেটাও যদি ভয় দেখিয়ে কেড়ে নেয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়? গরিবের মুখের খাবারটুকুও লুটে নিচ্ছে ওরা।’

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। অভিযুক্তরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় কেউ ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায় না। তবে প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ তাদের দাবি, এ ধরনের ঘটনা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে। দ্রুত দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে এই সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এদিকে অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও চাল ছিনতাইয়ের অভিযোগ তারা অস্বীকার করে। তাদের দাবি, ঘটনাস্থলে থাকলেও তারা কোনো অনিয়মে জড়িত ছিল না।

উলাশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক সমবায় কর্মকর্তা আব্দুর রাশেদ নারীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চালের মধ্যে ছয় বস্তা চাল উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর জানান, তিনি দিনভর এলাকার বাইরে ছিলেন। এ ঘটনা তিনি অবগত নেই। বিএনপি এসব প্রশ্রয় দেয় না। তবে এসবের সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শার্শা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আমিনুর রহমান নেদা জানান, অভিযুক্তরা কেউ তার লোক নয়। কেবল বিএনপি পরিবারের সদস্য। তাদের দলে কোনো পদও নেই। তিনি চাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শোনার পর শুক্রবার সকালে গ্রামে দলের সভা ডেকেছেন। ঘটনার সত্যতা পেলে অপরাধীদের ধরতে পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

এ বিষয়ে শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম রবিউল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে অভিযুক্তরা নারীদের চাল ফেরত দিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। বিস্তারিত জানতে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button