সংসদে জুলাই সনদ অস্বীকারের সাহস কোন রাজনৈতিক দল করবে— প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের


জাতীয় সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরসহ, সংস্কার কমিশনের সকল চেয়ারম্যান, ঐক্যমত কমিশনের সব সদস্য, জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সব দলের প্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ একটি সনদ তৈরি হবে— তা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে, পত্রিকায় আসবে— তখন কি আর কোনো রাজনৈতিক দল সাহস করবে সেটা অস্বীকার করার? যারা অস্বীকার করবে, তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় থাকবে?’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের দ্বিতীয় দফার ২২ তম দিনের সংলাপে বিরতিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সনদ জাতি, জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে একটি সামাজিক চুক্তি। আমি মনে করি, এই সনদ বাস্তবায়নের একমাত্র জায়গা হবে জাতীয় সংসদ।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি কোনো আইনি ভিত্তি চায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ একটি প্রস্তাবনা— যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কী প্রেক্ষিতে এই ঐক্যমত কমিশন গঠিত হয়েছে, কীভাবে সরকার গঠিত হয়েছে, ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রকৃতি কী ছিল, জাতির প্রত্যাশা ও অভিপ্রায় কী—এইসব বিষয়ে। এরপর সেই খসড়ার ভিত্তিতে একটি ‘অঙ্গীকারনামা’ তৈরি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে ঐক্যমত হবে, সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আইন, সংবিধান, বিধি-বিধান সংশোধন করা হবে— এ বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিশ্রুতিগুলো সংসদ গঠিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বিষয়ে আমরা পুরোপুরি একমত।’
বিএনপি জুলাই সনদের জন্য কোনো আইনি ভিত্তি চায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন যে, এটি একটি লিগ্যাল ডকুমেন্ট হবে। আমি বলি, এতগুলো রাজনৈতিক দল, এতদিন ধরে একসাথে ট্রান্সপারেন্ট আলোচনায় অংশ নিচ্ছে— এটা একটা ‘ওপেন কোর্ট ট্রায়ালের’ মতোই, সবকিছু সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। জাতি দেখছে কে কী বলেছে, কার অবস্থান কী। এরপর যখন প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরসহ, সংস্কার কমিশনের সকল চেয়ারম্যান, ঐক্যমত কমিশনের সব সদস্য, জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সব দলের প্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ একটি সনদ তৈরি হবে— তা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে, পত্রিকায় আসবে— তখন কি আর কোনো রাজনৈতিক দল সাহস করবে সেটা অস্বীকার করার? যারা অস্বীকার করবে, তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় থাকবে? এর চেয়ে বড় জাতীয় ঐকমত্য আর কী হতে পারে?’
জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা যে মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি, জুলাই-অগাস্টের ছাত্র অভ্যুত্থানের পর, জাতির যে প্রত্যাশা, শহীদদের যে অঙ্গীকার, রাজনৈতিক দলগুলোর যে প্রতিশ্রুতি, সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা— এগুলো উপেক্ষা করে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারবে, এটা আমি মনে করি না। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেই বিষয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত।’
তিনি বলেন, ‘আগেই কিন্তু অনেক সংস্কার বাস্তবায়িত হচ্ছে— বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে, অধ্যাদেশ জারি করে। শুধু সংবিধান সংশোধনের সুপারিশগুলো বাদ দিলে, বাকিগুলো আগেই বাস্তবায়ন সম্ভব। এমনকি চূড়ান্ত কমিটমেন্ট দেওয়ার আগেও তা সম্ভব। এই সবই হচ্ছে ঐক্যমতের ভিত্তিতে। অতএব, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংবিধান সংশোধন। জাতির সঙ্গে আমরা যে আলোচনা করেছি, যে বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে, তা নিয়েই আমরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করব।’
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ‘আর যেগুলো নিয়ে ঐক্যমত হয়নি, তা নিয়ে আমরা এখনো আলোচনা করছি, বিতর্ক করছি, সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছি। যদি কারো মধ্যে কোনো সন্দেহ থাকত যে, সবকিছু ক্ষমতা পাওয়ার পর বাস্তবায়ন করব— তাহলে তো অনেক আগেই সেটা করে ফেলা যেত। এখানে জাতিকে ধোঁকা দেওয়ার কোনো মানসিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘৬টি প্রধান সংস্কার কমিশনের মোট সুপারিশ ছিল ৮২৬টি। এর মধ্যে আমরা মাত্র ৫১টি প্রস্তাবে একমত হইনি। এত বড় একটি ঐক্যমতের প্রক্রিয়ার পরও কেউ কেউ বলে বিএনপি সংস্কার মানছে না।’