শিরোনাম

মেঝেতে শুয়ে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করুন

মেঝেতে শুয়ে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করুন

কেউ লিখেছেন, ‘বেস্ট পার্ট অব দ্য ডে’; কেউবা লিখেছেন, ‘ফ্রি থেরাপি’ অথবা ‘ফ্লোর টাইম কনভার্ট’! টিকটকে এসব ঘুরছে হ্যাশট্যাগ ফ্লোরটাইম (#floortime) লেখা ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে। এই হ্যাশট্যাগ লিখে পোস্ট করা লাখ লাখ ভিডিওতে দেখা যায়, অনেকে দৈনন্দিন চাপ থেকে মুক্তি পেতে মেঝেতে শুয়ে নিজেকে চাঙা করে তুলছেন!

হ্যাশট্যাগ ফ্লোরটাইম এরই মধ্যে মাইক্রোট্রেন্ড হয়েছে। টাইলস, কার্পেট, এমনকি ঘাসের ওপরে শুয়েও অনেকে নিজেকে তরতাজা করে তুলছেন মানসিক ও শারীরিকভাবে। প্রযুক্তির আলো-আঁধারি থেকে পৃথিবীতে ‘বিশ্রাম’ বিষয়টিকে পুনরুদ্ধার করার দারুণ এক প্রয়াস ফ্লোরটাইম। এটি শরীরকে কোনো চাপ দেওয়া নয়, বরং দেহ ও মনের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ তৈরির এক সহজ রূপ। জীবনকে কিছুক্ষণের জন্য ‘অফ’ মোডে রাখা শেখায় এই ফ্লোরটাইম। টিকটকে অনেকে বলছেন, মেঝের ওপর চিত হয়ে শুয়ে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে চলমান এই প্রক্রিয়া নিজেকে ফিরিয়ে আনে নিজের কাছে।

মানুষের জীবন গতিময়। প্রতিটি মুহূর্ত কাজে পরিণত করার চাপের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আমাদের দেহ ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ‘ফ্লোরটাইম’ এই অস্থিরতা দূর করার একটি দারুণ শক্তিশালী প্রক্রিয়া। #Floortime হ্যাশট্যাগে অনেকেই নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, মেডিটেশন বা গ্রাউন্ডিং টেকনিক অর্থাৎ পৃথিবীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের অনুভূতি শেয়ার করেন।

টিকটক ট্রেন্ড হিসেবে ‘ফ্লোরটাইম’ সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মূলত প্যারেন্টিং, মানসিক স্বাস্থ্য ও নিজের যত্ন নেওয়া সম্পর্কিত কন্টেন্টে। এটি মূলত ডিজিটাল ডিটক্স বা মানসিক স্বাস্থ্য চর্চা হিসেবে ট্রেন্ড করছে।

যেভাবে কাজ করে ফ্লোরটাইম

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হয়, করটিসল কমে, হৃৎস্পন্দন শান্ত হয়। মেঝের স্পর্শ শরীর ও মনে প্রাকৃতিক যোগাযোগ তৈরি করে। এর ফলে প্রোসিওসেপ্টিভ সংবেদন বাড়ে, উদ্বেগ দূর হয়। প্রক্রিয়াটি যোগব্যায়ামের শব আসনের মতো দেহ ও মনকে বিশ্রাম দেয়। এ নিয়ে করা এক গবেষণায় জানা গেছে, এতে ঘুম ভালো হয়, ব্যথা ও মানসিক চাপ কমে। মেঝেতে শুয়ে পড়লে মেরুদণ্ড প্রাকৃতিকভাবে ভালো থাকার রসদ পায়, পেশি শিথিল হয়। তবে ফ্লোরটাইম করার জন্য ফ্লোরে শুয়ে পড়ার আগে কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন অস্বস্তি হলে মাথার নিচে কুশন দিতে হবে। শ্বাস নিয়ন্ত্রণে বুকের নিচে সহযোগী কোনো জিনিস ব্যবহার করুন। মনোযোগ ভাঙলে চোখে মাস্ক দিন।

হ্যাশট্যাগ ফ্লোরটাইম মূলত ডিজিটাল ডিটক্স বা মানসিক স্বাস্থ্য চর্চা হিসেবে ট্রেন্ড করছে। ছবি: পেক্সেলস
হ্যাশট্যাগ ফ্লোরটাইম মূলত ডিজিটাল ডিটক্স বা মানসিক স্বাস্থ্য চর্চা হিসেবে ট্রেন্ড করছে। ছবি: পেক্সেলস

কীভাবে শুরু করবেন

  • মেঝে, কার্পেট বা ম্যাটে আরামদায়ক জায়গা নির্বাচন করুন।
  • নিজেকে স্থির করুন।
  • চোখ বন্ধ বা দৃষ্টি নরম রেখে ৫ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস শান্ত করুন।
  • কোনো নরম শান্ত সুরের সংগীত রাখতে পারেন।
  • শেষ হলে ধীরে ধীরে উঠুন। এরপর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন অনুভব করুন।

ফ্লোরটাইম যা কিছু করে

নার্ভাস সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক প্রশান্তি

  • ফ্লোরটাইম প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় করে। এটি দেহকে রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট মোডে নিয়ে যায়।
  • ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, হার্ট রেট, রক্তচাপ ও করটিসল স্রোত কমায়।
  • এতে মানসিক শান্তি আসে। মাথায় চলা যেকোনো চিন্তা বা অস্থিরতা দমন হয়।
  • ফ্লোরটাইমে মেঝের সঙ্গে শরীরের পরিচালনা বুঝতে সুবিধা হয়, প্রোসিওসেপটিভ সংযোগ বাড়ে। এ প্রক্রিয়া শরীরকে স্থির ও কেন্দ্রীভূত করে।
  • এটি আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং বলে পরিচিত। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, এটি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে, ব্যথা কমাতে এবং ঘুমের উন্নতিতে সহায়ক।
ফ্লোরটাইম প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় করে। এটি দেহকে রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট মোডে নিয়ে যায়। ছবি: পেক্সেলস
ফ্লোরটাইম প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় করে। এটি দেহকে রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট মোডে নিয়ে যায়। ছবি: পেক্সেলস

সংবেদনশীলতা ও ব্যথানাশক

  • মেঝেতে শুয়ে পড়লে শরীরের ব্যথা, বিশেষ করে মেরুদণ্ড নিয়ে চাপ কমে যায়। গ্র্যাভিটি সমানভাবে শরীরে কাজ করে।
  • ফ্লোরটাইমে হালকা যোগব্যায়াম বা বডি-স্ক্যান করলে ক্লান্ত পেশি শিথিল হয় এবং উদ্বেগ কমে।

মানসিক উপস্থিতি ও অপরাধ বোধমুক্ত বিশ্রাম

  • অনেকে মনে করেন, এগুলো মনের শান্তি ও শিথিলতার প্রতীক।
  • ফ্লোরটাইম অপরাধ বোধহীন বিশ্রামকে উৎসাহিত করে।

ফ্লোরটাইম কখন করবেন

  • এটি বিভিন্ন সময়ে করা যায়। অফিস শেষে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে, অতিরিক্ত চাপ বা ভারী ব্যায়ামের পর ফ্লোরটাইম করে শরীর শিথিল করা যেতে পারে।
  • এটি করার সময় মেঝে অস্বস্তিকর হলে মাথার নিচে বালিশ বা কাপড়, বুকের নিচে কুশন আর চোখের মাস্ক বা আই পিলো ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র: ফোর্বস, দ্য মাইন্ডস জার্নালস, ভেরি ওয়েল মাইন্ড



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button