আড়াই লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হওয়ার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া


দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও কয়েক দিনের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া অবশেষে সীমান্তে ‘তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনিই এই আলোচনার মধ্যস্থতা। খবর আল-জাজিরার।
আজ সোমবার মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। আলোচনার পর তিন নেতাই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা খুব ইতিবাচক অগ্রগতি দেখেছি, যা কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড দুই দেশের জন্যই কল্যাণকর হবে।’ তিনি জানান, দুই দেশই ২৮ জুলাই, অর্থাৎ আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ।’
আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, এ সংকট সমাধানে তাঁর দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের নেতৃত্ব ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রেখেছে। আলোচনা চলাকালে মালয়েশিয়ায় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূতরাও।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন, ‘আজকের বৈঠক খুব ভালো হয়েছে এবং আমরা এমন একটি ফল পেয়েছি যা অবিলম্বে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ বন্ধ করবে।’ তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘দৃঢ় ভূমিকার’ প্রশংসা করে বলেন, ‘আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে ‘আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্গঠনে’ সহায়ক হবে।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম বলেন, ‘থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং আমরা আশা করি, উভয় দেশই আন্তরিকতার সঙ্গে এটি কার্যকর করবে।’
আনোয়ারের উদ্যোগে হওয়া এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করা। এখন পর্যন্ত এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
তবে শান্তির এই বার্তার মধ্যেও সংঘর্ষ থামেনি। আল-জাজিরার সাংবাদিক টনি চেং থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশ থেকে জানান, আলোচনা চলাকালীনও সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো গোলাবর্ষণের আওয়াজ পাচ্ছি, বিশেষ করে কামান থেকে ছোড়া গোলার। থাইল্যান্ডে ব্যাপক সামরিক জড়ো হওয়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি। তবে মানুষ আজ কিছুটা ভালো খবরের জন্য অপেক্ষায় ছিল।’
থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রিচা সুকসুওয়ানন জানান, আজ সোমবার ভোরে কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচেই প্রদেশের সামরং এলাকায় নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগের, থাই সরকার জানায়, কম্বোডিয়ার ছোড়া রকেট হামলায় সিসাকেত প্রদেশে একজন নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, কম্বোডিয়ার স্নাইপাররা একটি বিতর্কিত মন্দিরে অবস্থান করছে এবং সীমান্তে সেনা জড়ো করে থাইল্যান্ডের ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা সোমবার বলেন, থাইল্যান্ড সীমান্তে ‘অসংখ্য সেনা’ মোতায়েন করছে এবং ভারী অস্ত্র দিয়ে কম্বোডিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সোমবার ভোরে থাই বাহিনী কম্বোডিয়ার পুরাকীর্তি হিসেবে পরিচিত তা মুএন থম এবং তা ক্বাই মন্দিরের আশপাশে হামলা চালায়। এগুলো কম্বোডিয়ার দাবি অনুযায়ী তাদের ভূখণ্ডে পড়ে, তবে থাইল্যান্ড তা মানে না।
সোচেতা আরও বলেন, থাই সামরিক বিমান কম্বোডিয়ার আকাশে স্মোক গ্রেনেড ফেলেছে এবং তাদের সেনাদের লক্ষ্য করে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে তিনি দাবি করেন, কম্বোডিয়ার বাহিনী সফলভাবে এসব হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
এর আগে, আল জাজিরার চেং বলেছিলেন, বাড়তে থাকা প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা দুই নেতাকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছে।