ঢাকার বাতাস আজ সহনীয়, শীর্ষে কাম্পালা


ঢাকার বায়ুমান বছরের বেশির ভাগ সময়ই দূষণের মাত্রা অতিক্রম করে থাকে। তবে দীর্ঘদিন পর গতকাল রাজধানীর বাতাস কিছুটা বিশুদ্ধ হয়েছিল, যা নগরবাসীর জন্য ছিল স্বস্তিদায়ক। আজকে ঢাকার বায়ুমানের কিছুটা অবনতি হলেও তা এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণত বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণা ও দূষণ কমে আসে, ফলে এ সময়ে ঢাকার বায়ুমান তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ শনিবার সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ৭৩, যা সহনীয় পর্যায়ের নির্দেশক। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ছিল ৪৪।
আইকিউএয়ারের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের করা দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ ঢাকার অবস্থান ২৫ তম। অথচ এক দিন আগেই ঢাকার অবস্থান ছিল ৮৫ তম।
গত কয়েক দিনের মতো আজও বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে উগান্ডার কাম্পালা। শহরটির বায়ুমান ১৮১, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। এই তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিশরের কায়রো ও বাহরাইনের মানামা। এই দুটি শহরের বায়ুমান যথাক্রমে ১৭৪ ও ১৭১। তবে কানাডার মন্ট্রিয়েল ও ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার বায়ুমান একই ১৬৬। তবে মন্ট্রিয়েল চতুর্থ ও ইন্দোনেশিয়া পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ-এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।