বাংলা বলায় আধার কার্ডধারী ভারতীয় যুবককে পাঠানো হলো বাংলাদেশে


বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায়। রাজস্থানে নির্মাণশ্রমিকের কাজে গিয়ে ধরা পড়েন মালদার কালিয়াচকের ২১ বছরের যুবক আমির শেখ। পরিবারের দাবি, ভোটার আইডি, আধার কার্ডসহ ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও রাজস্থান পুলিশ তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে এবং দীর্ঘ দুই মাস জেল হেফাজতে রাখে।
এরপর কোনো আদালতের রায় ছাড়াই বিএসএফের সহায়তায় তাঁকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার বাংলাদেশের অজ্ঞাতনামা এক এলাকা থেকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমিরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি ভারতীয়, আমাকে আমার ঘরে ফিরিয়ে দিন!’ এই ভিডিও সামনে আসতেই গোটা জালালপুর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস আগে জীবিকার সন্ধানে রাজস্থানে যান আমির। রাজস্থানে পৌঁছানোর পর দুই মাস আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। তাঁর কাছে ভারতের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কোনো তদন্ত বা আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাঁকে বিদেশি তকমা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
পরিবারের বক্তব্য, প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। আমিরের বাবা জেমস শেখ বলেন, ‘ভিডিও দেখে চিনতে পেরেছি আমার ছেলেকে। এখন জানি না ও কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে। আমাদের কাগজপত্র সব আছে। তা-ও যদি আমাদের ছেলেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তবে আর নিরাপত্তা কোথায়?’
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক আসিফ ফারুক আজ আমিরের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, এটা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা বাংলার অপমান। একজন ভারতীয় নাগরিককে এভাবে বিদেশে ঠেলে দেওয়া নিছক ভুল নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখায়, কীভাবে ভাষা, ধর্ম ও পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। বাংলাভাষী মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দেগে দেওয়া এখন যেন এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা, যা ভারতের নাগরিকত্ব আইন, মানবাধিকার ও জাতীয় সংহতির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। এই ঘটনা শুধু বাংলা নয়, সমগ্র দেশের কাছে একটি সতর্কবার্তা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজরে বিষয়টি নিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি।