শিরোনাম

আদিবাসী অঞ্জলী শীল এখন কীভাবে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করবেন

আদিবাসী অঞ্জলী শীল এখন কীভাবে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করবেন

পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না—এই মর্মে বহুবার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তব যেন অন্য কথা বলছে। কারণ ফের একবার উত্তরবঙ্গের এক বাসিন্দার হাতে এসে পৌঁছাল আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের চিঠি। এবার চিঠি পেয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার ময়মনসিংহপাড়ার গৃহবধূ অঞ্জলী শীল।

চিঠিটি পাঠানো হয়েছে কোকরাঝাড়ের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে। বিষয় তিনি ভারতীয় নাগরিক কি না, তা প্রমাণ করতে হবে আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে। চিঠির ভাষা—সম্পূর্ণ অসমিয়া। এমনকি, চিঠিতে তাঁর হাজিরার স্থানও উল্লেখ করা হয়েছে আসামেই। অথচ তিনি এবং তাঁর পরিবার বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন।

স্বামী নিত্য শীল পেশায় একজন নরসুন্দর। অঞ্জলী শীল জানিয়েছেন, তাঁর বাবা, ভাই, মামা—সবাই আসামে বাস করেন এবং তাঁরা সেখানকার ভূমিপুত্র। তাঁদের কাছে কোনো চিঠি না এসে একমাত্র তাঁর কাছেই কেন চিঠি এল, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

এদিকে গত মঙ্গলবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই চিঠি পুরো অসমিয়া ভাষায়, আসাম সরকারের তরফে পাঠানো। বাংলার ক্ষেত্রে আসাম কীভাবে হস্তক্ষেপ করে? এটা শুধু অনৈতিক নয়, অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।’

অঞ্জলী শীল বলেন, ‘আমি কাগজপত্র নিয়ে কোকরাঝাড়ে যাব, প্রমাণ দেব। কিন্তু এটা একটা ষড়যন্ত্রও হতে পারে। আমার পরিবারের কেউ চিঠি পায়নি, শুধু আমিই কেন?’

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে রাজ্যে এনআরসি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির তরফে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তৃণমূল কংগ্রেস এই চিঠিকে কেন্দ্র করে ‘আসামের অতি সক্রিয়তা’ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নাগরিকত্ব ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানো কৌশল’ বলে অভিযোগ তুলেছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে কোচবিহারের দিনহাটার চৌধুরীহাটের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকেও ঠিক একই ধরনের নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তখনো রাজ্যে হইচই পড়ে যায়। এবার অঞ্জলী শীলের ঘটনাকে ঘিরে সেই বিতর্ক আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে।

এনআরসি এবং নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্র—রাজ্য সংঘাত নতুন কিছু নয়। তবে এবার প্রশ্ন উঠছে—যেখানে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ‘বাংলায় এনআরসি নয়’, সেখানে কি আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্রদের নিশানা করা হচ্ছে?

রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্তরে তুলবে রাজ্য সরকার। এদিকে সাধারণ মানুষের মনে বাড়ছে উদ্বেগ—‘আমার নামের পাশেও কি কালো প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যাবে?’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button