শিরোনাম

সৈয়দপুরে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, খুনি গ্রেপ্তার

সৈয়দপুরে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, খুনি গ্রেপ্তার

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের চাঁদনগর এলাকায় সংঘটিত একটি ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে থানা-পুলিশ। গৃহপরিচারিকা ছামছুন নাহার (৬৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত শামীম বেগকে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই হত্যার কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র এবং চুরি করে নিয়ে যাওয়া একটি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি ও ল্যাপটপ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার শামীম বেগ শহরের চাঁদনগর এলাকার নঈম বেগের ছেলে। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফইম উদ্দিন শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর তুলশীরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রহিলা পারভীনের চাঁদনগরের বাসায় থাকতেন ছামছুন নাহার। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন ১ জুলাই (মঙ্গলবার) রহিলা পারভীন তাঁর সম্পর্কে বোন ছামছুন নাহারকে বাসায় একা রেখে স্কুলে চলে যান। বেলা সোয়া একটার দিকে তিনি বিদ্যালয়ের টিফিনের সময় বাসায় দুপুরের খাবার খেতে এসে দরজা বন্ধ পেয়ে ছামছুন নাহারকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু এতে তাঁর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশী এক মহিলাকে নিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাঁরা বাসার বাইরে দরজা খুলে বাসার ড্রয়িংরুমে মেঝেতে ছামছুন নাহারকে রক্তাক্ত ও নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

পরে খবর পেয়ে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম ওহিদুন্নবী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফইম উদ্দিনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। পরে পুলিশের সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যরা এসে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।

সৈয়দপুরের পাশে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট ফকিরপাড়ায় আজহার আলীর স্ত্রী ছামছুন নাহার। তিনি ২০১৮ সাল থেকে ওই শিক্ষিকার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সামসুল হক (৪৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকে নীলফামারী পুলিশ সুপারের নির্দেশে ছামছুন নাহার হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের অধিকতর তদন্তে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়।

ওহিদুন্নবীর নেতৃত্বে এই তদন্ত টিমে ছিলেন থানার ওসি মো. ফইম উদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান খান মারুফ। তাঁরা মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থলে অদূরে থাকা একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। পরে সিসিটিভির ফুটেজ ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছামছুন নাহার হত্যাকাণ্ডে একই এলাকার বাসিন্দা একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা খেটে গত ২০২০ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আসা শামীম বেগকে শনাক্ত করেন পুলিশ।

পরে গত ২০ জুলাই শামীম বেগকে ওই হত্যা ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ছামছুন নাহার হত্যার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নীলফামারী আদালতে সোপর্দ করে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান খান মারুফ।

তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁর দুই দিনে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ২৪ জুলাই দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে ছামছুন নাহারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেন শামীম বেগ। এরপর তাঁর স্বীকারোক্তি এবং তাঁর দেওয়া তথ্যমতে সৈয়দপুর শহরে গোলাহাট এলাকা থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া এলইডি টিভি ও ল্যাপটপটি উদ্ধার করে পুলিশ।

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফইম উদ্দিন জানান, ‘এ হত্যাকাণ্ডের মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রকৃত রহস্য এবং এর সঙ্গে জড়িত শামীম বেগকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button