শিরোনাম

কলকাতায় ধর্ষণের শিকার আইনের ছাত্রীর গলায় ও বুকে মিলেছে ক্ষতচিহ্ন

কলকাতায় ধর্ষণের শিকার আইনের ছাত্রীর গলায় ও বুকে মিলেছে ক্ষতচিহ্ন

কলকাতার এক আইন কলেজে ২৪ বছরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় চিকিৎসকদের প্রাথমিক পরীক্ষায় শারীরিক নিপীড়নের একাধিক চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এনডিটিভির হাতে আসা মেডিকেল রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভুক্তভোগীর গলা ও বুকে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। যদিও তাঁর যৌনাঙ্গ বা মুখমণ্ডলে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও যৌন নিপীড়নের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা করছেন তাঁরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ওই ছাত্রীর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরীক্ষার সময় তিনটি সোয়াব নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাঁর মূত্রের মাধ্যমে গর্ভধারণ পরীক্ষাও করা হয়, যার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে বলে জানা গেছে।

কলকাতা পুলিশ আজ শনিবার জানিয়েছে, সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের এ ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি কলেজের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিরাপত্তারক্ষীর জবাব ছিল ‘বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী’। ঘটনার সময় তিনি কলেজ প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন বলে সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে।

ওই নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত মোট চারজনকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হলো। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এবং কলেজটির বর্তমান দুই ছাত্র।

এই তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে, যেখানে ওই রক্ষীকে জোরপূর্বক বের করে দেন ওই তিন অভিযুক্ত।

ঘটনার পর ওই কক্ষ ও তার পাশে ছাত্র সংসদের কার্যালয়ে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

পুলিশকে দেওয়া বিবৃতিতে ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, গত বুধবার বিকেলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি হামলার শিকার হন। তাঁর দাবি, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনজন ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে ধরেন।

ওই তিনজনের মধ্যে দুজন তাঁকে একটি কক্ষে আটকে দেন তৃতীয়জনের সঙ্গে, যিনি তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

ভুক্তভোগী বলেন, তিনি বারবার অনুরোধ ও প্রতিরোধ সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করেন। অন্য দুজন বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন। যদি তিনি এ ঘটনার কথা কাউকে জানান, তাহলে তাঁর প্রেমিক ও পরিবারের ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ছাত্রী পুলিশের কাছে জানান, হামলার সময় তিনি প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। ওই সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে ইনহেলার এনে দেন। ইনহেলার ব্যবহার করে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। তখন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে আবার ধরে এনে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যান, যেখানে ধর্ষণের ঘটনা চলতে থাকে।

ভুক্তভোগী জানান, ওই সময় তাঁর মাথায় হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে রাত ১০টা ৫০ মিনিট নাগাদ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং আবারও ঘটনা গোপন রাখার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।

সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিয়েছে।

বিরোধী দল বিজেপির দাবি, মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রকে আড়াল করার চেষ্টা করছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মনোজিৎ মিশ্র একসময় কলেজটির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবিতে মনোজিৎ মিশ্রকে তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের, এমনকি লোকসভার সংসদ সদস্য ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো) সঙ্গে দেখা যাচ্ছে।

তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করেছে, মনোজিৎ আগে দলের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর দলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button