জলমহাল জামানত দেখিয়ে ঋণ নেন নিজাম হাজারী


খাস জলমহাল জামানত দেখিয়ে ফেনীর আওয়ামী লীগের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ন্যাশনাল ক্রেডিড অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক। কৃষিঋণ বিতরণে এমন গুরুতর অনিয়ম হওয়া ওই ঋণ বাতিলের পাশাপাশি ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা যায়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৪ শতাংশ সরল সুদে নিজাম হাজারীর প্রতিষ্ঠান স্নিগ্ধা ফিশারিজ অ্যান্ড হ্যাচারি এবং তাঁর স্ত্রী নূর জাহান বেগমের এন এন ফিশারিজ অ্যান্ড হ্যাচারিকে ৩ কোটি টাকার এই ঋণ দেয় এনসিসি ব্যাংকের রাজধানীর পান্থপথ শাখা। ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান দুটি ফেনী জেলার লনি হাজারী রোড এলাকায় অবস্থিত। ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা হয় ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৩৬ দশমিক ১৬ একর আয়তনের কৈয়ারা দিঘি জলমহাল।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই জলমহাল ২০২০ সালের ৫ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর স্ত্রী নূর জাহান বেগমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে সাবলিজ দেন স্থানীয় শুভপুর মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের অন্যতম নেতা শাহ জাহান। যদিও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯-এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, লিজ গ্রহীতা মৎস্যজীবী সংগঠন/সমিতি তাদের নামে লিজকৃত জলমহাল কোনোভাবেই সাবলিজ বা অন্য কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করতে পারবে না। যদি কেউ সাবলিজ দেয়, তবে ওই লিজ বাতিল হয়ে সরকারের অনুকূলে চলে যাবে। অথচ সাবলিজের এই জলমহাল জামানত রেখেই ঋণ দিয়েছে এনসিসি ব্যাংক।
খাস জলমহাল জামানত রেখে ঋণের বিষয়টি স্বীকার করে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) এম শামসুল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঋণ বিতরণে জলমহাল জামানত ছিল। কিন্তু এই ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে কিছু আপত্তি ছিল। কিন্তু ঋণ আদায় হওয়ায় তা সমন্বয় করা হয়েছে। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বাতিল করার কথা নয়। ঋণ নীতিমালা ভেঙে অপরাধের দণ্ড ও জরিমানা কেটে নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এনসিসি ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে অনেক চাপের মুখে এই ঋণ ছাড় করা হয়। সেখানে জামানত নিয়ে এত যাচাই করার সুযোগ ছিল না। ঋণের অনিয়মের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে।