শিরোনাম
শ্যামনগরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ, আটক ৪গজারিয়ার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারট্রাম্পের হুমকির পরেও রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে না ভারতকাল এইচএসসি-বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সময় নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ ডিএমপিরসংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলছে নারীপক্ষজামায়াত আমিরের সফল অস্ত্রোপচার, আইসিইউতে থাকবেন তিন দিনরাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালেন চট্টগ্রামের বৈছাআ নেত্রী লিজাহাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর করাসহ তিন দাবিতে বরিশালে কফিন মিছিলসারা দেশ থেকে বাগেরহাটকে বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিশতকোটি টাকার পাওনা বকেয়া রেখেই ‘দেশ ছাড়লেন’ ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকেরা

‘নোবেল ডিজিজ’ কী, অনেক নোবেল বিজয়ী এই ‘রোগে’ আক্রান্ত হন কেন

‘নোবেল ডিজিজ’ কী, অনেক নোবেল বিজয়ী এই ‘রোগে’ আক্রান্ত হন কেন

আলোক-তড়িৎ বা ফটোইলেক্ট্রিকের প্রভাব ব্যাখ্যা করার জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন আপেক্ষিক তত্ত্বের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। তবে নোবেল পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কর্মজীবনের প্রতি অতিরঞ্জিত শ্রদ্ধাবোধ আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে। আমি নিজেকে একপ্রকার অনিচ্ছুক প্রতারক ভাবতে বাধ্য হই।

তাঁর মতো একজন বিজ্ঞানীর কাছ থেকে এমন কথা শুনলে মনে হতে পারে, তিনি ‘ইমপোস্টার সিনড্রোমে’ ভুগছিলেন। এটি একধরনের মানসিক অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে অযোগ্য বা প্রতারক মনে করেন, যদিও চারপাশের সবাই তাঁকে যোগ্য বলেই গণ্য করে।

তবে সবাই আইনস্টাইনের মতো বিনয়ী হন না। অনেক নোবেল বিজয়ীই পুরস্কার পাওয়ার পর এমন কিছু বিশ্বাসে আস্থা প্রকাশ করেন, যা অনেকটাই অবৈজ্ঞানিক বা কুসংস্কারপূর্ণ। এ ধরনের আচরণ নিয়েই গঠিত হয়েছে একটি পরিভাষা—‘নোবেল ডিজিজ’ বা ‘নোবেলাইটিস’।

নোবেল পুরস্কার জয়ের পর অনেক বিজ্ঞানীকেই দেখা গেছে তাঁদের মূল গবেষণাক্ষেত্র থেকে সরে এসে অবৈজ্ঞানিক ও বিতর্কিত বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকতে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মনোবিদ্যা, অতিপ্রাকৃত শক্তি বা ষষ্ঠেন্দ্রিয় নিয়ে গবেষণায় আগ্রহ দেখিয়েছেন।

গবেষণাগ্রন্থ ক্রিটিক্যাল থিংকিং ইন সাইকোলজির এক অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে অনেক নোবেল বিজয়ী পরবর্তী সময়ে বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসে আকৃষ্ট হয়েছেন। কেউ কেউ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত ও বর্ণবাদী মত প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ মজার কল্পনার জগতে ঢুকে পড়েছেন।

রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয় করেন পিয়েরে কুরি। পরে তিনি আত্মা নিয়ে আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করেন এবং বিশ্বাস করতে থাকেন যে, অতিপ্রাকৃত জগৎ নিয়ে গবেষণা চৌম্বকত্বের মতো বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে!

একই রকমভাবে ইলেকট্রনের আবিষ্কর্তা ও নোবেল বিজয়ী জোসেফ থমসন দীর্ঘ ৩৪ বছর সোসাইটি ফল ফিজিক্যাল রিসার্চ’-এর সদস্য ছিলেন এবং আত্মা ও অতিপ্রাকৃত বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন।

১৯১৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হন শার্ল রিশে। তিনি ‘এক্টোপ্লাজম’ শব্দটির প্রবর্তক। তিনি বিশ্বাস করতেন, সেয়ান্স বা আত্মার ডাকের আসরে মিডিয়ামরা ((যাঁরা আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে দাবি করেন) এই এক্টোপ্লাজম তাদের শরীর থেকে নির্গত করতে পারেন। তবে বাস্তবে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভাওতা।

উদাহরণ হিসেবে মিডিয়াম হেলেন ডানকান প্রায়ই কাপড়ের পাতলা কাপড় (চিজক্লথ) গিলে নিতেন এবং প্রয়োজনে তা মুখ দিয়ে বের করে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন, যেন তা আত্মার কোনো জৈব পদার্থ। মাঝে মাঝে সেই কাপড়ে রাবারের গ্লাভস বা ম্যাগাজিন থেকে কাটা মুখের ছবি লাগিয়ে আরও ভৌতিক রূপ দিতেন। এটা এমন এক প্রতারণা, যা একজন নোবেল বিজয়ী চিকিৎসাবিদের চোখ এড়ানোর কথা নয়।

১৯১৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী চার্লস রিচে বিশ্বাস করতেন, স্যান্সে মধ্যমরা তাদের শরীর থেকে ‘এক্টোপ্লাজম’ নির্গত করতে পারে—এই শব্দের উদ্ভাবকও তিনিই। যদিও বাস্তবে এটি ছিল জালিয়াতি; অনেকে মুখে কাপড় গিলে তা পরে মুখ দিয়ে বের করে এমন ভান করতেন, যেন তা আত্মার প্রকাশ।

আবার কিছু ‘নোবেল ডিজিজ’ খুবই ক্ষতিকর ধারণার দিকে ধাবিত করেছে। ১৯৯৬ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী হন রিচার্ড স্মলি। তিনি আবার বিবর্তনতত্ত্ব অস্বীকার করেছিলেন। অনেকে আবার ইউজেনিকস, লোবোটমি এবং অটিজম নিয়ে ক্ষতিকর মতবাদ সমর্থন করেছেন।

১৯৯৩ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী ড . কেরি মুলিস জলবায়ু পরিবর্তন এবং এইডস নিয়ে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক মতকে অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রেও বিশ্বাস করতেন। মুলিস একবার দাবি করেন, এমনকি একজন বিজয়ী দাবি করেছিলেন, একবার তিনি একটি উজ্জ্বল সবুজ রঙের রাকুনের (ছোট আকারের মাংসাশী প্রাণিবিশেষ) দেখা পেয়েছিলেন, যে মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে তার সঙ্গে কথা বলেছিল।

তাঁর ভাষায়, ‘১৯৮৫ সালের এক রাতে আমি ক্যালিফোর্নিয়ার জঙ্গলে আমার কেবিনে একটি আলোঝলমলে সবুজ রাকুন দেখি, যে একটি কমলা মোটরসাইকেল চালিয়ে আসে। মধ্যরাতে এটি একটি সুরেলা ডলফিনে রূপান্তরিত হয়।’

কেন এমনটা ঘটে

নোবেল বিজয়ী পল নার্স মনে করেন, এ ধরনের বিচ্যুতির পেছনে মিডিয়া এবং সমাজের চাহিদাও দায়ী। তিনি বলেন, ‘অনেকের চোখে হঠাৎ করেই আমি যেন সব বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলাম। এটা আমার জন্য বেশ অবাক করার মতো ছিল। আমি নিজেকে খুব বেশি বিনয়ী ভাবি না এবং জীববিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান সম্পর্কে আমার কিছু জ্ঞান অবশ্যই আছে। তবে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ—সেটা আমি কোনোভাবেই নই।’

তিনি অন্য বিজয়ীদের সতর্ক করে বলেন, ‘আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিতে বলা হবে, বিভিন্ন পিটিশনে স্বাক্ষর করতে বলা হবে, বিভিন্ন আন্দোলনে যোগ দিতে বলা হবে—কিছু ভালো, কিছু নয়। তবে নিজের বিশেষজ্ঞতার সীমানা ও বিজ্ঞান থেকে খুব বেশি দূরে যাবেন না।’

গবেষক দলের মতে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, অহংকার ও অতিরিক্ত খোলামেলা মনোভাবের মতো কিছু মানসিক ত্রুটি ও ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য খুব বুদ্ধিমান মানুষদেরও মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করতে পারে।

তবে গবেষকেরা এটাও স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমাদের হাতে এমন কোনো পরিসংখ্যান নেই, যা প্রমাণ করে যে, নোবেল বিজয়ীরা গড়ে অন্যদের তুলনায় বেশি অবৈজ্ঞানিক বিষয়ে আগ্রহী হন।’

তথ্যসূত্র: আইএফএল সায়েন্স



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button