শিরোনাম

জাতীয় সনদের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষে ১৯ বিষয়ে ঐকমত্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় সনদের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষে ১৯ বিষয়ে ঐকমত্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সনদ তৈরির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার সমাপ্তি ঘটেছে আজ। আলোচনার শেষ দিন শেষে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘এই নিয়ে ২৩ দিন ধরে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একত্রিত আলোচনা করেছি। এর আগে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৩০ টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায় দুই মাস ধরে দলগত ও জোটগতভাবে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়।’

এই প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্বেই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো বাদ দিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়। আলী রিয়াজ জানান, এই ১৯টি বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।

১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সংক্রান্ত বিধান, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংবিধান সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিশেষত উচ্চকক্ষ গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেক্টোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।

আলী রিয়াজ জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে বিএনপি উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলোচনা যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রশ্নে বিএনপি সহ কয়েকটি দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।

সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংযোজন না করে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, এনডিএম, আম জনতার দল এবং বিএনপি।

উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দল ও জোট একমত হলেও, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয়তান্ত্রিক দল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং আম জনতার দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতে সব দল একমত হলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এতে ভিন্নমত পোষণ করেছে।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, মার্কসবাদী বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং জেএসডি নোট অব ডিসেন্ট দেয়। মার্কসবাদী বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেন।

নারী প্রতিনিধিত্বে সবচেয়ে বেশি নোট অব ডিসেন্ট এসেছে। অধিকাংশ দল জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ধাপে ধাপে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে একমত হলেও, কিছু দল সরাসরি নির্বাচন এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত দেয়।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আলোচনা শেষে প্রতিদিনই প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে। আজকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, আগামীকালের মধ্যে আমরা বিস্তারিত আপনাদের কাছে পৌঁছে দেব।’

তিনি জানান, আজকের আলোচনায় দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঐক্যমত তৈরির চেষ্টা ছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা শেষ করার লক্ষ্য ছিল, আমরা তা সফলভাবে করতে পেরেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব।’

আলোচনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে এবং কমিশনকে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনার অনুরোধ জানিয়েছে দলগুলো। কমিশন মনে করে, বাস্তবায়নের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ প্রয়োজন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করব সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button