শিরোনাম

গলায় জুতার মালা, কেটে দেওয়া হয় চুল

গলায় জুতার মালা, কেটে দেওয়া হয় চুল

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে গাছে বেঁধে এক নারীকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে (ভাইরাল)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির ওই নারীর নাম শহিদা বেগম। তিনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের দুলা মিয়ার স্ত্রী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় ও ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত রোববার দুপুরে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউনুস মিয়া ও তার লোকজন আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে তারা বেধড়ক মারপিট করে। মাথার চুল কেটে দেয়। জুতার মালা পরিয়ে দেয়। পরে বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সমাজে তাদের ব্যাপক প্রভাব। ফলে ওই প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলছেন না স্থানীয় কেউ। এ ঘটনায় হরিনাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি অভিযোগ দিয়েছি।’

ওই নারী আরও বলেন, ‘আমার শরীরে এখনো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নির্যাতন করে আমার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে গরু বিক্রির টাকা সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। তারা আমাকে এখানে থাকতে দিবে না। তারা আমার বসতভিটার জমিটুকু নিতে চায়। পূর্বশত্রুতার জেরে আমাকে মারপিট করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না। নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি আমরা। তাদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

সরেজমিনে ঘুরে ও অভিযোগে জানা গেছে, গত রোববার পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা (মাঝিপাড়া) গ্রামের দিনমজুর দুলা মিয়ার স্ত্রী শহিদা বেগম পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে বড় জায়ের বাপের বাড়িতে পোশাক তৈরি করতে যান। সেখান থেকে নিজের বাড়িতে ফেরার পর শহিদা বেগমকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে মারধর শুরু করেন স্থানীয় ইউনুস মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। একপর্যায়ে শহিদা বেগমকে তাঁর উঠানের আমগাছের সঙ্গে পেছনে হাত ও পা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা নির্যাতন করে প্রভাবশালী নারী ও পুরুষেরা। কাঠ আর বাঁশের লাঠি দিয়ে তাঁকে মারপিট করা হয়। পরে মাথার চুল কেটে এবং মুখে রং মেখে দেওয়া হয়। তারপর জুতার মালা পরিয়ে দিয়ে তাঁকে বিবস্ত্র করে রাখা হয়। এরপর ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ওই নারীর হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান মজনু বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইউনুস মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এ সময় তাঁর লোকজন উল্টো সাংবাদিকের ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করেন।

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার আওতাধীন হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) সবুজার আলী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে। থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button