শিরোনাম

মাদকের মামলার জন্য পৃথক তথ্য ব্যবস্থাপনা

মাদকের মামলার জন্য পৃথক তথ্য ব্যবস্থাপনা

দেশের সব আসামির মামলা-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত থাকা পুলিশের ক্রিমিনাল ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যারে মাদক কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না সরকার। পুলিশ সদর দপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজস্ব সিডিএমএস তৈরি করবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে ২৩ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল সোমবার পাঠানো সভার কার্যবিবরণীতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পুলিশের সিডিএমএস সফটওয়্যারে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার প্রদান বা বিকল্প হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নিজস্ব সিডিএমএস তৈরি করে সেখানে সময়-সময় জনগণের প্রবেশাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

এ বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, পুলিশের সিডিএমএস সফটওয়্যারে অনেক স্পর্শকাতর তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এই সফটওয়্যারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাইরে যে কারও প্রবেশাধিকার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক উল্লেখ করেছেন। এ কারণে সফটওয়্যারটিতে জনগণের সরাসরি প্রবেশাধিকার দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। আইজিপি জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজস্ব সিডিএমএস তৈরি করতে পারে এবং এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারবে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুলিশের সিডিএমএস সফটওয়্যারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া যে কারও প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তর দেবে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজস্ব সিডিএমএস তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করবে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব সিডিএমএসে জনগণের প্রবেশাধিকার থাকবে কি না, কার্যবিবরণীতে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

থানায় বাধ্যতামূলকভাবে জিডি গ্রহণ নিয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সভায় অনলাইনে জিডি গ্রহণে জোর দেওয়া হয়েছে। সভায় আইজিপি জানান, ৭৫ শতাংশ থানা বা ইউনিটে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালু রয়েছে। সব থানায় পর্যায়ক্রমে অনলাইন জিডি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২২ জুলাই পর্যন্ত ৫ হাজার ৮০৬টি জিডি অনলাইনে দায়ের হয়েছে।

কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, অনলাইনে এফআইআর চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এ জন্য পুলিশ অধিদপ্তর ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। অনলাইন এফআইআরের ফরম্যাট তৈরির কার্যক্রম চলছে।

চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, নম্বরপত্র যাচাই-বাছাই পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ চাকরিপ্রার্থীর ভেরিফিকেশন রিপোর্টের অংশ হবে না। চাকরির জন্য সব পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।

অভিযান পরিচালনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইস থাকা ও ভেস্ট পরার সুপারিশ করে সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে সভায় আইজিপি বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে এই পাইলটিং শুরু হয়েছে। সারা দেশে এই কার্যক্রম শুরু করতে ৪০ হাজার জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইস ও ভেস্ট প্রয়োজন। এসব বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ছাড়া কোনোভাবেই এফআইআর-বহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার না করার সুপারিশ করেছিল সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে সভায় স্বরাষ্ট্রসচিব ও আইজিপি জানান, প্রতিটি ক্ষেত্রে কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশক্রমে আসামি ধরতে হলে প্রকৃত অপরাধীর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। ফলে সভায় বর্তমান পদ্ধতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুলিশের জন্য পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সার্ভিস গঠনের সুপারিশের বিষয়ে সভায় স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, মেডিকেল সার্ভিস গঠন করা হলে এর আওতায় নিয়োগকৃত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও পদায়নের বিষয়ে জটিলতা তৈরি হবে। তাঁদের মধ্যে পেশা নিয়ে হতাশা তৈরি হবে এবং তাঁদের কাছ থেকে সেবা প্রাপ্তি ব্যাহত হবে। ফলে নিচের দিকের পদে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে প্রেষণে এবং সিনিয়র পর্যায়ে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন সচিব।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তর যৌথভাবে প্রতিবেদন সরকারকে দেবে। আর সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভায় পুলিশের অ্যাজেন্ডা থাকলে আইজিপিকে বোর্ডে উপস্থিত রাখার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপিত আইজিপিস কপ্লেইন সেলের মতো করে র‍্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত ছাড়াও ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষার জন্য আইন ও বিচার বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের উদ্যোগ এবং ছয়টি বিভাগীয় শহরে সায়েন্টিফিক ইন্টিগ্রেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button