শিরোনাম

বাঘ সংরক্ষণে পাঁচ নারীর সাহসী লড়াই

বাঘ সংরক্ষণে পাঁচ নারীর সাহসী লড়াই

বনের অভিজাত প্রাণী বাঘ। তাকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা শুধু প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য ক্ষতি। বাঘ সংরক্ষণ তাই এক মানবিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক লড়াই। বিশ্বের নানা প্রান্তের কিছু সাহসী নারী কেবল গবেষণা বা রক্ষণাবেক্ষণ নয় বরং নিজেদের জীবনই উৎসর্গ করেছেন বাঘ রক্ষায়। বিশ্ব বাঘ দিবসে তাঁদের গল্প না জানালেই নয়।

লতিকা নাথ, ভারত

‘টাইগার প্রিন্সেস’ হিসেবে খ্যাত লতিকা নাথ। ভারতের প্রথম নারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ হিসেবে বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে ডি.ফিল. শেষ করেছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তাঁকে ‘টাইগার প্রিন্সেস অব ইন্ডিয়া’ বা ভারতের বাঘ রানি উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ নন, বনে ঘুরে, বাঘের ছবি তুলে ও লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাঘ সংরক্ষণে জড়িয়ে আছেন। তাঁর কাজ আদিবাসীদের অংশগ্রহণমূলক সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ।

‘টাইগার প্রিন্সেস’ হিসেবে খ্যাত লতিকা নাথ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
‘টাইগার প্রিন্সেস’ হিসেবে খ্যাত লতিকা নাথ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি ইকোলজিস্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ডেস্কে নয় বরং বনে ঘুরে ফিরে গড়ে তোলেন নিজের ক্যারিয়ার। ওয়াইল্ড লাইফ অব ইন্ডিয়াতে লতিকা একজন গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে চিকিৎসা পরিবেশ ও পরিবেশন পরিকল্পনায় ভূমিকা রেখেছেন। যেখানে তিনি বাঘের পরিবেশগত পৌরাণিক অবকাঠামো শনাক্ত করেন এবং তা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। লতিকা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওয়াইল্ড লাইভ ফটোগ্রাফার, যিনি চিতাবাঘ, স্নো লেপার্ডসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাঘের ছবি তুলে বাঘ সংরক্ষণের বার্তা দেন।

প্রেরণা সিং বিন্দ্রা, ভারত

প্রেরণা ‘টাইগারলিংক’ নামে একটি জার্নাল সম্পাদনা করেন। ছবি: লিংকডইন
প্রেরণা ‘টাইগারলিংক’ নামে একটি জার্নাল সম্পাদনা করেন। ছবি: লিংকডইন

একাধারে সাংবাদিক, লেখক ও পরিবেশ কর্মী প্রেরণা। পরিবেশ নীতিনির্ধারণ ও মাঠ পর্যায়ের উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন তিনি। প্রেরণা ‘টাইগারলিংক’ নামে গুরুত্বপূর্ণ একটি জার্নাল সম্পাদনা করেন। তিনি ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত পরিকল্পনায় সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর কলম বাঘ সংরক্ষণের অন্যতম হাতিয়ার। তিনি বাঘ সংরক্ষণকে কেবল একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় নয়, বরং পরিবেশ, সমাজ ও রাজনীতির সংযোগকারী শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখালেখি, বক্তৃতা এবং পলিসি তৈরিতে সহায়তার মাধ্যমে প্রেরণা ভারতীয় বন্যপ্রাণীর ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করতে কাজ করে চলেছেন।

উমা রামাকৃষ্ণান, ভারত

উমা বাঘের জিন নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ছবি: সেল ডটকম
উমা বাঘের জিন নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ছবি: সেল ডটকম

ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস বেঙ্গালুরুর অধ্যাপক উমা রামাকৃষ্ণান। তিনি একজন মলিকুলার ইকোলজিস্ট। উমা বাঘের জিন নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁর গবেষণার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বাঘের প্রজনন, অভিবাসন এবং সংরক্ষণযোগ্য অঞ্চলের সম্ভাব্য নকশা। এগুলো বাঘ সংরক্ষণ নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উমা ও তাঁর দল উন্নত ল্যান্ডস্কেপ জেনেটিকস পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে শহরায়ণ, মহাসড়ক ও বসতি বিস্তার বাঘের সংযোগে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। এই তথ্য ভারতের নতুন সংরক্ষিত করিডর ও সংরক্ষণ নীতি পরিকল্পনায় সাহায্য করছে।

সবিতা মাল্লা, নেপাল

বরাদিয়া জাতীয় উদ্যানের তরাই করিডর এলাকায় সবিতা গবেষণা ও মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ছবি: ডব্লিউডব্লিউএফ নেপাল
বরাদিয়া জাতীয় উদ্যানের তরাই করিডর এলাকায় সবিতা গবেষণা ও মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ছবি: ডব্লিউডব্লিউএফ নেপাল

ডব্লিউডব্লিউএফ নেপালের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সবিতা মাল্লা। সংস্থাটি বার্ডিয়া ন্যাশনাল পার্কে বাঘ সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা অন্যতম প্রতিষ্ঠান। সবিতা সেখানে বাঘের বাসস্থান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় পার্কে বাঘদের টিকা দেওয়া পরিমাণ ও বাঘের সংখ্যা দুটিই বেড়েছে। তিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছেন। বরাদিয়া জাতীয় উদ্যানের তরাই করিডর এলাকায় তিনি গবেষণা ও মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সেখানে ২০১৬ সাল থেকে ১৪০টির বেশি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে গবেষণার জন্য। এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ২০০৯ সালে যে ১৮টি বাঘ শনাক্ত হয়েছিল, পরবর্তীতে সে সংখ্যা ৩৭টিতে উন্নীত হয়েছে।

এরনি মুসাবিনে, ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার বন্যপ্রাণী চিকিৎসক এরনি মুসাবিনে নিজেকে সুমাত্রার বাঘ উদ্ধার ও চিকিৎসায় উৎসর্গ করেছেন। ছবি: কম্পাস
ইন্দোনেশিয়ার বন্যপ্রাণী চিকিৎসক এরনি মুসাবিনে নিজেকে সুমাত্রার বাঘ উদ্ধার ও চিকিৎসায় উৎসর্গ করেছেন। ছবি: কম্পাস

ইন্দোনেশিয়ার বন্যপ্রাণী চিকিৎসক এরনি মুসাবিনে। তিনি নিজেকে সুমাত্রার বাঘ উদ্ধার ও চিকিৎসায় উৎসর্গ করেছেন। এরনি গভীর জঙ্গল থেকে বহু বিপন্ন বাঘ উদ্ধার করে অস্ত্রোপচারসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সাহসিকতা প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। এরিন ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অন্তত ১৫টি বাঘ উদ্ধার ও চিকিৎসা করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার কিছু দুর্গম অঞ্চলে তিনি বাঘের চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরিন মুসাবিনে ২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়ান টেলিভিশন লিপুটান ৬ এর ‘ব্রেভ ওমেন’ পুরস্কারে ভূষিত হন।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডাউন টু আর্থ, এনসিবিএস, আইবায়োলজি



আরও দেখান
Back to top button