‘নতুন একটি দলের মহারথী’ লেখা পোস্ট পরিবর্তন করে ব্যাখ্যাও দিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম


অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি বক্তব্যের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছেন, যা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে দেওয়া একটি পোস্টে দুর্নীতির বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তিনি ওই অংশের লেখা কিছুটা সংশোধন করেন। বিশেষ করে ‘একটি নতুন দলের কয়েকজন মহারথী’ অংশটি তিনি পরিবর্তন করেছেন।
এই ‘নতুন দল’ বলতে কাদের বুঝিয়েছেন, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্যের একটি জবাবও দিয়েছেন তিনি।
মাহফুজ আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রথমে রাত ২টা ৫১ মিনিটে দেওয়া পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
এই পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর, ভোর ৪টা ২৮ মিনিটে মাহফুজ আলম এই অনুচ্ছেদটি পরিবর্তন করেন। সংশোধিত পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে।’ প্রথম পোস্টের শেষ বাক্য ‘একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে’ সংশোধিত পোস্টে তিনি সেটি বাদ দিয়েছেন।
প্রাথমিক পোস্টে মাহফুজ আলম তদবির চেষ্টার একটি ঘটনা তুলে ধরে দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘তদবিরের কথা উঠল যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজও স্থগিত হয়।’
কথোপকথন রেকর্ড করে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ করে মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘সে ব্যক্তি কনভারসেশন (কথোপকথন) রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই, আমরা এ কাজ করতে দেইনি। আর ওই লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে এ কাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।’

পোস্টের শেষে ‘পুনশ্চ’ দিয়ে মাহফুজ আলম যোগ করেন, ‘আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসংগতির অভিযোগ করেনি। একটি নূতন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজার কোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ সংশোধিত পোস্টে এই অংশেও পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে ‘নূতন দলের মহারথী’র স্থলে ‘বিভিন্ন দলের মহারথী’দের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং শেষের বাক্যটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত পোস্টে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘কয়েকটা বাক্য নিয়ে অযথাই জল ঘোলা হচ্ছে, তাই এডিট করে দিলাম। জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিক্যাল মবিলিটির ল্যাডার। একটা না, কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’
এই পোস্টে একজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘নতুন দল বলতে কারা? দলতো দুইটা এখন আলোচনায়। এনসিপিও আছে আপ-বাংলাদেশও আছে। নিজের ভাই-ব্রাদারদের দলের কারও বিরুদ্ধে কেউ বুঝেশুনে এমন স্টেটমেন্টতো দেয় না, দেওয়ার কথাও না! আপ-বাংলাদেশের কাউরে বুঝাইছেন নাকি কিছু? নাকি অন্য কেউ?’
এটির জবাবে মাহফুজ লেখেন, ‘জুলাইয়ের পক্ষের অনেকের দুর্নীতির খবর পাচ্ছি। এ জন্য সার্কেল বলসি। কিন্তু, একটা ছোট অংশ বাদে জুলাইয়ের সব কর্মী এখনো আগের অবস্থায় আছে। দল শুধু এনসিপি না, আরও আছে। এনসিপির চেয়ে নূতন দল বা কিছু প্ল্যাটফর্মের আরও বেশি লোক রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গে আছে। শুধু এনসিপিকে দায় দেওয়া হচ্ছে। আর, নূতন দলের কিছু মহারথী রাজনীতির হিস্যার জন্য সব করতে রাজি। কিন্তু, তারাও জানেন আমি কতটা ক্লিন হ্যান্ডস রেখে চলছি।’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর এই পোস্টের সঙ্গে তাঁর ভাই মাহবুব আলমের একটি ফেসবুক পোস্টও শেয়ার করেন। ‘মিথ্যা অভিযোগের জবাব!!’ শিরোনামে ওই পোস্টে মাহবুব আলম তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানোর অভিযোগ করেন এবং তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী দেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে তিনি কোনো তদবিরের কাজ করেননি এবং তাঁদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা ছাড়া কোনো আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। তিনি বনি আমিন নামক এক ইনফ্লুয়েন্সারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।