শিরোনাম
সেবাকে দায়িত্ব হিসেবে নিলে বুঝব, জুলাই গণআন্দোলনের শিক্ষা ধারণ করেছি: বাণিজ্য উপদেষ্টাফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল, প্রশাসক নিয়োগ১৭৫ দিনে কোরআনের হাফেজ শিশু তানভীরডিজিটাল করা হচ্ছে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির তথ্য: ধর্ম উপদেষ্টাযে দাবিতে সড়কে দাঁড়ালেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন বর্জনছেলের হাতে মায়ের মৃত্যু, ছেলে গ্রেপ্তারপরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ধর্মঘট, যুক্তরাষ্ট্রের চার শহরে আবর্জনার দুর্গন্ধইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও দুর্নীতির শ্বেতপত্রের দাবিতে বিক্ষোভবন বিভাগের কাঠ ভারতে পাচারকালে আটক ৫ভুল ট্রেনে উঠে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী, গ্রেপ্তার ৩

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ছে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ছে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ যুগোপযোগী করতে নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংশোধিত আইনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ানো, উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা নির্ধারণ, ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং সংশোধিত আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এই জরিমানার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৬। এর মধ্যে ১০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নানা কারণে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ৩,৪১,০৯৮ জন শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আইনটি সংশোধনের কাজ চলছে। আশা করছি, তা শিগগির চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে।’

সংশোধিত আইনের খসড়ায় দেখা যায়, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এবার ১ লাখ বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া বাড়ির কথা বলা হয়েছে। আগের আইনে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভবনের প্রয়োজনীয় আয়তন ২৫ হাজার বর্গফুট করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ১ একর জমি থাকার বাধ্যবাধকতা বাড়িয়ে ৫ একর করা হয়েছে। তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪ সালের আগে অনুমোদন পেয়েছে, তাদের জন্য জমির পরিমাণের বাধ্যবাধকতা শিথিল থাকবে।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিল বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ন্যূনতম ৫ কোটি টাকা, অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ন্যূনতম ৩ কোটি টাকা এবং বাকি এলাকাগুলোর জন্য দেড় কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত রাখতে হতো। সংশোধিত আইনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮ কোটি, অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫ কোটি আর এর বাইরের এলাকার জন্য ৩ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্থায়ী সনদহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগাম টানারও উদ্যোগ নেওয়া রয়েছে সংশোধিত আইনে। বলা হয়েছে, আইনের অধীনে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সাময়িক অনুমতির (সাত বছর) মেয়াদের মধ্যেই স্থায়ী সনদ গ্রহণ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী স্থায়ী সনদ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রথম সাত বছর এবং নবায়নের পাঁচ বছর মোট ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধিত আইনে। বলা হয়েছে, ২১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে। বোর্ডের ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ/শিক্ষানুরাগী হতে হবে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করা যাবে না। প্রয়োজনে ট্রাস্টি বোর্ডে সরকার একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন করতে পারবে। ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে যুক্ত হতে পারবেন না। এমনকি কোনো সভা বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না। পুরোনো আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটিতে সরকার ও ইউজিসি দুজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করতে পারত। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার একজন ও ইউজিসি দুজন সদস্য দিতে পারবে।

সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পিএইচডি ডিগ্রি অথবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যেকোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ-৪ স্কেলে ৩.৫ এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতাসহ অন্তত ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা লাগবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোনোটিতে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না। উপাচার্য দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

সংশোধিত আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সংশ্লিষ্ট কোর্সের পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইউজিসির কাছ থেকে অনুমোদন করা উপযুক্ত বেতনকাঠামো থাকতে হবে।

সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার ও শাখা ক্যাম্পাস করা যাবে না বলেও সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে। এই আইনের অধীনে অনুমোদনপ্রাপ্ত নয় এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা ক্যাম্পাস, স্টাডি সেন্টার বা টিউটোরিয়াল সেন্টার ইত্যাদিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কোনো ধরনের প্রচার করা যাবে না।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে ‘জাতীয়’, ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ ব্যবহার না করা, প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৩টি অনুষদ থাকা, প্রতি তিন মাসে একটি সিন্ডিকেটের সভা আহ্বানসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের কথা রয়েছে সংশোধিত আইনে।

সার্বিক বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাই। তবে শাস্তির জন্য সাজা বৃদ্ধিই সমাধান নয়। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করায় জোর দিতে হবে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button