শিরোনাম

রংপুরের ১০ কিমি সড়কে ৬৩৬৫ টন পাথর উধাও

রংপুরের ১০ কিমি সড়কে ৬৩৬৫ টন পাথর উধাও

রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কে সংস্কারকাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। ২৭ কোটি টাকার ১০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের এই প্রকল্পে অন্তত ৩৬৫ টন পাথর গায়েব করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডন এন্টারপ্রাইজ। সেনাবাহিনীর অভিযানে অনিয়ম ধরা পড়লেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সড়ক বিভাগ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের রংপুর মেডিকেল মোড় থেকে পাগলাপীর বাজার, তারাগঞ্জের শলেয়াশাহ বাজার থেকে বরাতি সেতু, তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তারাগঞ্জ সেতু ও তকনাগঞ্জ বাজার থেকে চিকলি বাজার পর্যন্ত সড়কের ১৭ কিলোমিটার অংশ ডিবিএসটিসহ সংস্কার করতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪৬ টাকায় কাজ পায় রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডন এন্টারপ্রাইজ। ইতিমধ্যে ১০ কিলোমিটারের ডিবিএসটি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

গত বুধবার বিকেলে লেফটেন্যান্ট নাজমুলের নেতৃত্বে রংপুর সেনানিবাসের ৬৬ ডিভিশনের ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের আওতাধীন ৩৪ বেঙ্গল রেজিমেন্ট পরিচালিত একটি নিয়মিত টহল দল সিটি মোড় এলাকায় কাজ পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় সন্দেহ হলে রাস্তার গঠন ও উপকরণ পরিমাপ করে অনিয়মের প্রমাণ পান তাঁরা।

প্রকল্প অনুযায়ী প্রতি বর্গমিটারে ২৩ কেজি পাথর দেওয়ার শর্ত থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৮ কেজি পাথর দিয়ে সংস্কারকাজ করছে। প্রতি বর্গমিটারে ৫ কেজি পাথর কম। হিসাব অনুযায়ী সংস্কারকাজ শেষ হওয়া ১০ কিলোমিটারে প্রায় ৩৬৫ টন পাথর দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার ও পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব প্রমাণ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেন ওই সেনা কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেনাসদস্যরা একটি ট্রেতে সড়কে দেওয়া পাথর নিয়ে ঠিকাদার, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীর সামনে পরিমাপ করেন। এ সময় পাথর কম পাওয়া যায়। তা ছাড়া সংস্কার শেষ হওয়া সড়কের অংশে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কোথাও কোথাও পাথর উঠে গেছে, ফাটল বেরিয়েছে, আবার কোথাও বড় গর্ত রয়েছে।

সিটি মোড় এলাকার বাসিন্দা জোনাব আলী বলেন, ‘কাজ খুবই খারাপ হচ্ছে। একদিকে পাথর দিচ্ছে, আরেক দিক দিয়ে উঠে যাচ্ছে। আমরা অভিযোগ করলেও কেউ কানে নেয়নি। সেনাবাহিনী ধরার পর প্রমাণ পাইছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

হাসানুর রহমান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তার সামনেই কাজ খারাপ করছে ঠিকাদার। কিন্তু কোনো কথা বললে তাঁরা রেগে যান। মনে হয়, তাঁরা মোটা অঙ্কের টাকা খাইছেন ঠিকাদারের কাছ থেকে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডন এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্ট অনুযায়ী প্রতি বর্গমিটারে ২৩ কেজি পাথর দেওয়ার কথা ছিল। সেনাবাহিনী পরীক্ষা করার পর আমরা ১৮ কেজি পেয়েছি। সড়ক ও জনপথের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কাজ করছি। ৮০০ মিটারে ৫ কেজি পাথর কম হয়েছে। এটা আবার রিপেয়ার করে দেব।’

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ডিজাইনে ছিল ২৩ কেজি, সেখানে ১৮ কেজি পেয়েছে। আমাদের দেখভাল করার লোক রয়েছে। যেহেতু দীর্ঘ এড়িয়া, তাই কমবেশি হতে পারে। সেটা অবশ্যই আমরা ঠিক করে দেব।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button