শিরোনাম
ভারতে ব্যবসায়িক পরিবারে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব‘জয় বাংলা’ স্লোগানে টিকটক বানাতে গিয়ে আটক ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা‘চীনপন্থী’ এমপিদের অপসারণে তাইওয়ানের সংসদে বিতর্কিত ভোটওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার ব্যাংক ও কাস্টমসের সামষ্টিক ব্যর্থতা: এনবিআর চেয়ারম্যান২৩ মামলার আসামি খুন, দাউদকান্দির গৌরীপুরে মিষ্টি বিতরণদল ঘোষণা করেই বাংলাদেশ শুনল বিশ্বকাপ স্থগিতের খবরজীবননগরে দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যা, পালিয়েছে স্ত্রী-ছেলেমাইলস্টোনের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাস খুলবে কবে সিদ্ধান্ত কালবিহারে চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণপঞ্চগড়ে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে গুজব, সতর্কবার্তা জেলা প্রশাসনের

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মুরগির ফার্মে পরিবেশের বারোটা

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মুরগির ফার্মে পরিবেশের বারোটা

গ্রামীণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মুরগির খামার। সেই খামারের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বসতবাড়িতে। এখানেই শেষ নয়, মুরগির বিষ্ঠা ফেলা হচ্ছে গ্রামের খালে। এতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে জলাধারের পরিবেশ। এলাকাবাসী অভিযোগ করলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার পরও থামছে না পরিবেশদূষণ।

এমন ঘটনা ঘটছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। উপজেলার কাঁকনহাট গড়গড়ায় গড়ে তোলা খামারটি নাবিল গ্রুপের। প্রতিষ্ঠানটির নাম নাবা মুরগি ফার্ম। প্রতিদিন এই ফার্মে বিপুল পরিমাণ বিষ্ঠা হয়। খামারে কিছু বিষ্ঠা পরিশোধন করে জৈব সারে রূপান্তর করা হয়। বাকি বিষ্ঠা রাতের আঁধারে পরিশোধন ছাড়া ফেলা হয় রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নাচোল ও শিবগঞ্জের বিভিন্ন খালে।

এ নিয়ে এলাকার লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পরিবেশ অধিদপ্তরে অনেক অভিযোগ দিয়েছে। তাতে কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গত শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানে নাইম আলী নামের এক ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাবা ফার্মকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নাইমের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার হোগলা নয়াদিয়াড়ী গ্রামে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাইমই রাতের আঁধারে ট্রাকভর্তি মুরগির বিষ্ঠা নিয়ে ফেলে আসতেন। বেশি বিষ্ঠা ফেলা হয়েছে কাঁকনহাটের খাড়ি, তানোর উপজেলার বুরুজ, লব্যাতলা, ধামধুমসহ বিভিন্ন এলাকার খালে। তানোরের মাড়িয়া জোকারপাড়া গ্রামের একটি পুকুরে বিষ্ঠা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মাজাহাটি, শিবগঞ্জ উপজেলার বারেক বাজার দানিয়ালগাছির গ্যারোলি বিল, নাচোলের কাতলা কানদোর বিল এবং সদর উপজেলার ঝিলিম এলাকায় ফেলা হয় ফার্মের বিষ্ঠা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাবিল গ্রুপের লোকজন রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে কোম্পানির নিজস্ব ড্রাম ট্রাকে করে এসব বর্জ্য ফেলে পালিয়ে যায়। খাল ও পুকুরের পানি গ্রামের লোকজন সেচ, রান্না ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করত। এখন পানির দূষণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। এই পানি ব্যবহার করলে জমিতে ফসল হচ্ছে না। পুকুর ও খালের পোকামাকড় মরে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাবিল গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দৌজা বলেন, ‘আমি একবার ওই ফার্মে গিয়েছিলাম। ফার্মটা অনেক দূরে অবস্থিত। ফার্মের কারও সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ নেই। তাই তাদের সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে বলতে পারছি না।’

সম্প্রতি তানোর-চৌবাড়িয়া রাস্তার ধারে গভীর রাতে নাবিলের বর্জ্য ফেলে পালিয়ে যায় একটি ড্রাম ট্রাক।

এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধের জন্য তানোরের বাঁধাইড় ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আসগর আলী সম্প্রতি রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, বর্জ্য ফেলার সময় ট্রাক আটকালে নাবিলের লোকজন তাঁদের হুমকি দেন। সম্প্রতি এমন দুটি ট্রাক তানোরের বুরুজ এলাকায় আটক করে লোকজন পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ট্রাকচালকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন।

তানোরের সরনজাই ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘খালের পানিতে বর্জ্য ফেলায় গ্রামের অনেক মানুষের হাঁস-মুরগি ও পুকুরের মাছ মারা গেছে। পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন ঘরের জানালাও খুলতে পারছি না দুর্গন্ধের কারণে।’

শুক্রবারের অভিযানে প্রসিকিউটর ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক কবির হোসেন। তিনি বলেন, মুরগির বিষ্ঠা পচে বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়। এসব জীবাণু পশুপাখি ও মানুষের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি পরিবেশের ভারসাম্য বিপর্যস্ত করে।

অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা রিশিকুল ও পাকড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় গিয়ে এসব বর্জ্য ফেলার প্রমাণ পেয়েছি। এগুলো বন্ধের জন্য এলাকার লোকজন নানা অভিযোগ করছিল। তারা বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছে। এই কাজের সঙ্গে জড়িত একজনকে পেয়েছি। তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর নাবা ফার্মকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

শামসুল ইসলাম বলেন, এসব বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে জৈব সারে রূপান্তর করার নিয়ম। নাবা ফার্মের যে প্লান্ট রয়েছে, তার ক্যাপাসিটি নেই।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button