ত্রাণ সংগ্রহকারীদের ওপর ইসরায়েলি গুলিবর্ষণ চলছেই, গাজায় নিহত ছাড়াল ৫৬ হাজার


ইসরায়েলের টানা হামলায় স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভোর থেকে এখন গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। গাজা চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এ নিয়ে ২০ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের শুরু থেকে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়াল।
সোমবার নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা নিজেদের পরিবারের জন্য ত্রাণের খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে। এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে। সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থন দেয় এবং জাতিসংঘ এর আগেই এই সংস্থার বিরুদ্ধে ত্রাণকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার অভিযোগ এনেছে।
প্রাণঘাতী এসব হামলার শিকার হচ্ছেন মূলত ক্ষুধার্ত সাধারণ মানুষ, যারা পরিবার-পরিজনের জন্য খাবারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বিতরণ কেন্দ্রে যাচ্ছেন। অনেক সমালোচক এসব স্থানকে ‘মানব কসাইখানা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ দিন দিন গাজার খাদ্যসংকট আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
গত ২৭ মে থেকে জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে এসব কেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি নিহত এবং প্রায় ১ হাজার জন আহত হয়েছেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ গাজা শহর থেকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল একদিকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধরত, অন্যদিকে পুরো গাজা উপত্যকায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ বিমান হামলা চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য কখনো ত্রিপলের তাঁবু, কখনো বাসাবাড়ি।
তিনি বলেন, ‘রাফা এবং নেতজারিম করিডরের বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত মানুষজন জড়ো হচ্ছেন। আজ (সোমবার) এখন পর্যন্ত সেখানে ১৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মোট ৩০ জন নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।’ এদিকে, ফিলিস্তিনের ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
একই জেলার বেইত লাহিয়া এলাকার আল-সালাতিন অঞ্চলে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি দেখতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৩ ভাই নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পের আল-আউদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সালাহউদ্দিন সড়কে জমায়েত হওয়া মানুষের ওপর চালানো হামলায় নিহত দুই ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহত অবস্থায় ৩৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে দ্রুত মধ্য গাজার অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি, পূর্ব গাজার শুজাইয়া এলাকায়ও ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৫৯ জন।