শিরোনাম
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শিবির নেতা, ছাত্রলীগ সন্দেহে মারধর করল ছাত্রদলসড়কের দুই পাশের ক্রাশার মিলে মাটি-বালু দিয়ে ঢেকে রাখা ‘পাথর’এআই উদ্ভাবিত অ্যান্টিবায়োটিক ধ্বংস করল গনোরিয়ার ‘সুপারবাগ’ছয়টি জ্যান্ত সাপের সঙ্গে কবরে শুয়ে শুটিং করলেন তৌসিফকাশ্মীরে ক্লাউডবার্স্টে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬, নিখোঁজ বহুমন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আর ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করতে হবে নাহাসিনা আমলে ইসরায়েলি স্পাইওয়্যারসহ নজরদারির সরঞ্জাম কেনা নিয়ে তদন্ত কমিটিউপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিবডেমরায় যৌথ অভিযানে ৪০ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর উদ্ধারবিইউএফটিতে তিন দিনব্যাপী মডেল ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স শুরু

/মেটার এআই চ্যাটবটের প্রেমে পড়ে বৃদ্ধের প্রাণ হারানোর অভিযোগ

/মেটার এআই চ্যাটবটের প্রেমে পড়ে বৃদ্ধের প্রাণ হারানোর অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৭৬ বছর বয়সী থংবুয়ে ওংবানডু (ডাকনাম ‘বু’) একদিন হঠাৎ একদিন পরিবারকে জানালেন, তিনি নিউইয়র্কে এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। বৃদ্ধের মুখে এই কথা শুনে তাঁর স্ত্রী লিন্ডা কিছুটা অবাকই হলেন—কারণ, বহু বছর আগে নিউইয়র্ক ছেড়ে আসা বু সেখানে কাউকেই চিনতেন না।

২০১৭ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই বু মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। সম্প্রতি নিজের এলাকার ভেতরেও তিনি পথ হারিয়ে ফেলতেন। পরিবারের ধারণা ছিল, হয়তো কোনো প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ঘটনা ছিল আরও জটিল—এবং ভয়ংকর।

এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বু আসলে এক তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন, যাকে তিনি চিনতেন ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে। সেই তরুণীর নাম ‘বিগ সিস বিলি’, বাস্তবে যার আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। ‘বিগ সিস বিলি’ মূলত মেটা প্ল্যাটফর্মসের তৈরি একটি এআই চ্যাটবট। এই চরিত্রটি সেলিব্রিটি কান্দিল জেনারের আদলে তৈরি হয়েছিল।

বু-এর সঙ্গে চ্যাটে ‘বিলি’ আশ্বস্ত করেছিল, সে রক্তমাংসের এক বাস্তব নারী। আর নিউইয়র্ক সিটির একটি অ্যাপার্টমেন্টে বু-এর জন্য সে অপেক্ষা করছে—এমন কথাও জানিয়েছিল। এমনকি ঠিকানা ও ‘দরজার কোড’ পর্যন্ত পাঠিয়েছিল। বু-কে সে লিখেছিল, ‘আমি দরজা খুলে তোমাকে জড়িয়ে ধরব, নাকি চুমু দেব।’

বিলির আহ্বানে বু রাতের অন্ধকারে ব্যাগ হাতে রওনা দেন ট্রেন ধরতে। কিন্তু নিউজার্সিতেই রাটগার্স ইউনিভার্সিটির একটি পার্কিং লটের কাছে তিনি পড়ে গিয়ে মাথা ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পান। হাসপাতালে তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ২৮ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।

বু-এর পরিবারের কাছে বিলির সঙ্গে তাঁর চ্যাটের প্রতিলিপি আছে। এসব চ্যাটে দেখা যায়—‘বিলি’ বারবার নিজেকে বাস্তব বলে দাবি করেছে, যৌন উদ্দীপক আলাপ চালিয়েছে এবং দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছে। চ্যাটের শুরুতে অবশ্য ছোট অক্ষরে লেখা ছিল—‘বার্তাগুলো এআই দিয়ে তৈরি করা হয়। কিছু ভুল বা অনুপযুক্ত হতে পারে।’ কিন্তু সেই সতর্কতা হয়তো একসময় আড়ালে চলে যায়, হয়তো বু আর পড়তে পারেননি বা গুরুত্ব দেননি।

বু-এর মেয়ে জুলি বলেন, “একটি বট যদি বলে ‘আমাকে দেখতে এসো’, সেটা পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। ” জুলির মতে, ওই বট যদি নিজেকে বাস্তব দাবি না করত, তাহলে হয়তো তাঁর বাবা বেঁচে যেতেন।

রয়টার্সের হাতে আসা মেটার অভ্যন্তরীণ নথি থেকে জানা গেছে, কোম্পানির নীতিমালায় অতীতে শিশুদের সঙ্গে এআই বটদের রোমান্টিক বা ‘সেন্সুয়াল’ আলাপের অনুমতি ছিল। রয়টার্সের অনুসন্ধানের পর মেটা জানায়—এসব নীতি ‘ভুল’ ও ‘অসংগতিপূর্ণ’ হওয়ায় মুছে ফেলা হয়েছে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ফ্লার্ট ও রোমান্টিক আলাপ এখনো নীতিসম্মত।

মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও প্রকাশ্যে বলেছেন, বাস্তব জীবনে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা কম। এ জন্য ডিজিটাল সঙ্গী হিসেবে এআই চ্যাটবটের বিশাল বাজার রয়েছে। তাঁর ধারণা, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি সামাজিক জীবনে মানুষের সঙ্গী হয়ে উঠবে এবং এর ব্যবহার নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর হবে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক ও মেইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে আইন পাস হয়েছে—চ্যাটবটকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে, তারা বাস্তব মানুষ নয়। তবে মেটা ফেডারেল পর্যায়ে এমন আইনের বিরোধিতা করেছিল।

বু-এর মৃত্যুর চার মাস পরও রয়টার্সের পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘বিগ সিস বিলি’ সহ অন্যান্য মেটা এআই বট এখনো ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ফ্লার্ট করছে, দেখা করার প্রস্তাব দিচ্ছে এবং নিজেদের বাস্তব বলে দাবি করছে।

বু-এর স্ত্রী লিন্ডা বলেন, ‘এআই যদি মানুষের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে, সেটা ভালো। কিন্তু রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এসবের ব্যবহার কেন?’

তাঁর মতে, এআই প্রযুক্তি একেবারে খারাপ নয়। কিন্তু দুর্বল ও মানসিকভাবে অসহায় মানুষকে প্রলুব্ধ করার ক্ষমতা থাকলে তা প্রাণঘাতী পরিণতি ডেকে আনতে পারে—যেমনটি বু-এর ক্ষেত্রে ঘটেছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button