সীতাকুণ্ডে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পারিবারিক কলহের জেরে ফাতেমা আক্তার (২৬) নামে এক গৃহবধূকে মারধরের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
এর আগে, বিক্ষুব্ধ পরিবার ও এলাকাবাসী সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাজারে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও। তাঁরা ফাতেমা আক্তারের স্বামী মুসলিম উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহতের মামাতো ভাই ও উত্তর বগাচতর এলাকার সমাজকর্মী আব্দুল্লাহ আল যাকারিয়া জানান, প্রায় ১০ বছর আগে ফাতেমার সঙ্গে মুসলিম উদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ফাতেমা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন। শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরাও নির্যাতনে যুক্ত ছিলেন।
যাকারিয়া বলেন, ১৪ জুন তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে মুসলিম উদ্দিন ফাতেমাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন। ফাতেমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ফাতেমা টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত বুধবার রাতে মারা যান।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন মুসলিম উদ্দিন। যাকারিয়া বলেন, ‘যদি সে নির্দোষ হতো, তাহলে পালাত না। এমনকি স্ত্রীর জানাজায়ও অংশ নেয়নি।’
যাকারিয়া আরও অভিযোগ করেন, শুরুতে মুসলিম উদ্দিন জানান ফাতেমা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন। পরে বলেন, ফাতেমা নিজেই আগুন দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার সময় মুসলিম উদ্দিনের বড় ছেলে প্রতিবেশীদের জানান, তাঁর বাবাই মাকে মারধরের পর আগুন লাগিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমার মেজ ভাই নূর নবী বলেন, ‘আমার বোন তার সন্তানদের জন্য সবকিছু সহ্য করে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা থানায় গিয়েও মামলা দায়ের করতে পারিনি, পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা গ্রহণ, অভিযুক্ত মুসলিম উদ্দিনের গ্রেপ্তার, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি, নিহতের পরিবারের জন্য আইনি ও মানসিক সহায়তা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান, স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুর রহমান শওকত, খাইরুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন, নেছার উদ্দিন মেজবা প্রমুখ।