শিরোনাম

চুরির আশঙ্কায় রাত জেগে গ্রামবাসীর পাহারা, থানায় গিয়ে বিক্ষোভ

চুরির আশঙ্কায় রাত জেগে গ্রামবাসীর পাহারা, থানায় গিয়ে বিক্ষোভ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আশঙ্কাজনকহারে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। থানায় বারবার অভিযোগ দিয়েও চুরি বন্ধ না হওয়ায় নিজেরাই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা। এরই মধ্যে সোমবার দিবাগত রাতে চোর চক্রের আটজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন গ্রামবাসী।

আটক ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি ও হারানো মালপত্র ফিরে পেতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে ওসির আশ্বাসে গ্রামবাসী ফিরে যান।

জানা যায়, গত এক মাসে উপজেলার পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী, মধ্যগৌরীপাড়াসহ শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর, ডাঙাপাড়া, দক্ষিণপাড়াসহ বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে অন্তত ৫০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। রক্ষা পায়নি সরকারি দপ্তরও।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়েও রাতের আঁধারে তালা কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকায় কয়েকবার এমনকি একই বাড়িতে পরপর তিনবার চুরির খবর পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা প্রতিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই ফুলবাড়ী পৌর এলাকার পশ্চিম কাঁটাবাড়ী এলাকার মিন্টু সরকারের ঘরের জানালা ভেঙে প্রায় ৫ ভরি স্বর্ণসহ ১ লাখ টাকা চুরি হয়। ১ আগস্ট ফুলবাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যগৌরীপাড়া গ্রামের রায়হান চৌধুরীর বাড়িতে গভীর রাতে ঘরের জানালা ভেঙে ৩ ভরি স্বর্ণ, ৭ ভরি রুপাসহ মোবাইল ফোন, আসবাবপত্রসহ ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়। সপ্তাহ না কাটতেই একই এলাকার হাফিজুল ইসলামের বাড়ি থেকে আসবাবপত্রসহ টাকা চুরি হয়। ৬ আগস্ট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের জানালার গ্রিল কেটে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরায় দেখা গেলেও চোরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর এলাকার অবস্থা আরও খারাপ। গত রোববার (১০ আগস্ট) রাজারামপুর দক্ষিণপাড়ার মোরসালিন হাজির বাড়িতে চুরি হয়। কেমিক্যাল স্প্রে করে গ্রিল কেটে ৫ ভরি স্বর্ণ, সাড়ে ৮ লাখ টাকা ও ৪ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল চুরি করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য আব্দুল ওয়াহাব মিয়ার বাড়ি থেকে দুই জোড়া স্বর্ণের বালা, কানের ঝুমকা, চেইন ও মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী রুবেল মিয়ার গোয়াল থেকে ২টি বিদেশি গাভি চুরি হয়। ভিমলপুর গ্রামের কোরবান আলী আজাদের বাসা থেকে ২৭ জুলাই রাতে একটি ডিসকভার ১৩৫ সিসি মোটরসাইকেল চুরি হয়। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের একটি দোকানে পরপর তিনবার চুরি হয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালপত্র নিয়ে যায়। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে গবাদিপশু, আসবাবপত্র, অটোচার্জার, অটোভ্যান ও রিকশা চুরি হচ্ছে।

ভুক্তভোগী শাহানা পারভীন, রোকনুজ্জামান রনি, মাজেদুর রহমান, মোরসালিন ইসলাম জানান, প্রতিটি চুরির ধরন প্রায় একই রকম। চোরেরা ঘুমের ওষুধজাতীয় কিছু স্প্রে করে সবকিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামে বারবার চুরির ঘটনায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও চুরি বন্ধ হয়নি, পুলিশ তেমন কোনো জোরদার ব্যবস্থাও নিচ্ছে না।

রাজারামপুর ডাঙাপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এক সপ্তাহে ৫টি চুরিসহ সম্প্রতি ১০-১২ চুরি সংগঠিত হয়েছে এই এলাকায়। প্রতিটি চুরির ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমরা নিজেরা রাত জেগে পাহারা বসিয়েছি। সোমবার রাত ২টার দিকে চুরি করতে আসা কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে একই গ্রামের চিহ্নিত চোর দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মোরসালিন হাজির চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, কিছু স্বর্ণ ও কিছু সৌদি রিয়াল উদ্ধার করা হয়।

শিবনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামেদুল ইসলাম বলেন, একই এলাকায় বারবার চুরির বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। এটি একটি বড় চোর চক্র। তাদের চুরির ধরন অনেক আধুনিক। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন। তাঁরা আটজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম খন্দকার মুহিব্বুল বলেন, গ্রামবাসী আটজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পুলিশ চুরি বন্ধে জোরদারভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩০-৪০ জন চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও চুরি করছেন।

ওসি জানান, এই চোরেরা মূলত মাদকসেবী। মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে চুরি করেন তাঁরা। পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। সবাই সহযোগিতা করলে মাদকের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালানো হবে। সবার সচেতনতাই পারে মাদক ও চুরি রোধ করতে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button