ইরানের ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী, ইসরায়েল কি ঠেকাতে পারবে


ইরানের আধা-সরকারি মেহের সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। গত বছর, ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছিল, তেহরান ওই সময় ইসরায়েলে তাদের হামলায় নতুন ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এর আগে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বশেষ হামলায় তারা ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সফলভাবে ভেদ করেছে। ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’-এর ‘শেষের শুরু’ বলে উল্লেখ করেছে আইআরজিসি।
তবে ইরানের এই দাবির বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য আসেনি।
ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র কী?
ফাত্তাহ, আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘উন্মোচনকারী’। এটি ইরানের তৈরি প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ২০২৩ সালে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়।
পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের সময়, আইআরজিসি অ্যারোস্পেসের তৎকালীন প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ বলেছিলেন, ফাত্তাহ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির জন্য একটি ‘প্রজন্মগত উল্লম্ফন’। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে এবং বাইরে পরিবর্তনশীল গতিপথ অনুসরণ করতে পারে এবং যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘ফাত্তাহকে অন্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা যাবে না কারণ এটি বিভিন্ন দিকে এবং বিভিন্ন উচ্চতায় চলাচল করে।’
গত বছর, ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছিল, তেহরান সেসময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের নতুন ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
ফাত্তাহ-১ একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে বর্ণনা করে ইরান। তার মানে হলো, এটি শব্দের গতির ৫ গুণ, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মাইল বা ৬ হাজার ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চলে!
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রায় সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই উড্ডয়নের সময় হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। বিশেষ করে যখন ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুর দিকে নামতে থাকে।
ফাত্তাহ মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। এটি কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র বিভিন্ন অভিযানের জন্য বিভিন্ন ওয়্যারহেড ব্যবহার করতে সক্ষম।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন গবেষণা সহযোগী ফ্যাবিয়ান হিনজ এ বিষয়ে বলেন, ফাত্তাহ-১-এর একটি ‘ম্যানুভারেবল রিএন্ট্রি ভেহিক্যাল’ রয়েছে। তার মানে হলো, এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সময় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়াতে তাৎক্ষণিক দিক পরিবর্তন করতে পারে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের বহু আলোচিত ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তবে তাদের মধ্যম পাল্লার অ্যারো সিস্টেম, ডেভিডস স্লিং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এরপরও যখন একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়্যারহেড লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সময় হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে তখন সেটিকে আটকানো কঠিন হয়ে যায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বেশ দূর পাল্লার। এটি একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগেই প্রতিহত করার সক্ষমতা রাখে।