ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ কী?


উন্নত জীবনের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসন প্রত্যাশীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই স্বপ্নে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার স্বপ্ন নিয়ে কঠিন পথ পার করেছিলেন বহু উদ্বাস্তু। কিন্তু তাদের অনেককেই এবার খোয়াতে হচ্ছে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়স্থল।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প পা রাখার তিন দিনের মধ্যেই অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজে বের করতে ধরপাকড় শুরু করেছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারও করেছে তার প্রশাসন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারও মতে ১ কোটি, আবার কারও মতে দেড় কোটিরও বেশি।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
এবারের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প বারবারই তুলে এনেছেন অভিবাসন সংকটের নানা দিকের কথা। তার একাধিক বক্তৃতায় স্থান পেয়েছে অভিবাসন নীতি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন অবৈধ অভিবাসন হলো যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ। তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনো মূল্যে ‘অনুপ্রবেশকারী’ মুক্ত করতে অঙ্গীকার করেছেন।
আবার একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন যে, ‘আমেরিকা শুধু আমেরিকানদের জন্য,’ অন্য অবৈধ অভিবাসীদের এখানে স্থান নেই। ট্রাম্পের এই অবস্থানের কারণে বাংলাদেশিসহ অনেক অভিবাসীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
গুয়ান্তানামো বে কারাগার ও ট্রাম্পের হুমকি
কিউবার কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারের নাম শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে না এমন লোক পাওয়া মুশকিল। এবার সেই জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পাঠানোর কথা বলেছেন ট্রাম্প। গুয়ান্তানামো কারাগার হলো বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ও নিশ্ছিদ্র বন্দিশালাগুলোর একটি।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের গুয়ান্তানামো বে কারাগারে রাখবেন তিনি। এর জন্য ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৩০ হাজার বন্দির থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে।
অভিবাসীদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল
ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের নিয়ে কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি নিয়েছে একটি কঠোর সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদি মা-বাবা জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন, তবে তাদের সন্তান শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে জন্মের কারণে নাগরিকত্ব পাবে না।
এই নীতি কার্যকর হলে H-1B ও H-4 ভিসায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন। কারণ, তাদের সন্তানরা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই নাগরিকত্ব পেত। কিন্তু নতুন নিয়মে তা আর সম্ভব হবে না।
মার্কিন অভিবাসন নীতি ও বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সারা বিশ্বেই প্রভাব ফেলবে। প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব, রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কঠোর অভিবাসন নীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও আঘাত হানতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বৈধ অভিবাসী। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি থাকেন।
অভিবাসন কঠোর হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রেমিট্যান্স শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভই স্থিতিশীল রাখে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির ফলে কূটনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে, যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতি কঠোর হচ্ছে ঠিকই, তবে যুক্তরাষ্ট্রও অভিবাসন ছাড়া টিকতে পারবে না। বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই, কারণ বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই বৈধ অভিবাসী। তবে যেসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।