স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি যেভাবে


উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথাই বলছি। প্রতিবছর লাখো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার দৌড়ে নামেন, কিন্তু সুযোগ মেলে অল্প কিছু শিক্ষার্থীর। তাই এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এখন থেকেই সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
ভর্তি পরীক্ষার প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থাকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট) এবং মেডিকেল কলেজ।
প্রতিবছর ১৩ থেকে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি দেন। তাঁদের অনেকেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন; কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক লাখ আবেদন জমা পড়ে; কিন্তু সুযোগ পান মাত্র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ বাস্তবতা প্রমাণ করে, প্রতিযোগিতা কতটা কঠিন। তাই আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে এক ধাপ এগিয়ে থাকা যায়।
লক্ষ্য নির্ধারণ ও প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা
প্রথমেই ঠিক করতে হবে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে পড়তে চান। লক্ষ্য স্পষ্ট না হলে প্রস্তুতিও বিক্ষিপ্ত হবে। প্রকৌশলে ভর্তি হতে চাইলে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নে দক্ষ হতে হবে। মেডিকেলে যেতে চাইলে জীববিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিতে হবে।
একই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম, নম্বর বণ্টন ও প্রশ্নের ধরন জেনে রাখা জরুরি। শুধু কোচিংয়ের ওপর নির্ভর না করে অনলাইন লেকচার, মোবাইল অ্যাপ, প্রশ্নব্যাংক থেকেও কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
সময় ব্যবস্থাপনা: সাফল্যের মূল চাবিকাঠি
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সময় ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বড় বিষয়। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে অনেক কিছু পড়ার তালিকা করেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সময়ের অভাবে সব শেষ করতে পারেন না। এ জন্য রুটিন তৈরি করা দরকার।
সময় ব্যবস্থাপনা ভর্তি প্রস্তুতিতে সময় ব্যবস্থাপনাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে সময়ের অভাবে পড়া শেষ করতে পারেন না। এ জন্য রুটিন তৈরি করা জরুরি। যেমন—
সকাল: গণিত বা ইংরেজি অনুশীলন।
দুপুর: মূল বিষয় পড়া (পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি)।
বিকেল: ছোট টপিক—সাধারণ জ্ঞান, চলতি ঘটনাবলি।
রাত: মডেল টেস্ট বা পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের সমাধান।
এভাবে ভাগ করে পড়লে চাপও কমে, পড়াও সহজে আয়ত্তে আসে।
পড়াশোনার কৌশল
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সাধারণত এমসিকিউ ধাঁচের হয়। তাই মুখস্থ করার চেয়ে বোঝার ওপর জোর দিতে হবে। কিছু কৌশল হলো:
■ পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের সমাধান।
■ শর্ট নোট তৈরি করে রাখা।
■ মাইন্ডম্যাপ, চার্ট ব্যবহার।
■ বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি।
■ নিয়মিত মডেল টেস্ট দেওয়া।
বিভাগভিত্তিক প্রস্তুতি
বিজ্ঞান বিভাগ: গণিতের সূত্র, পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা, রসায়নের সমীকরণ, জীববিজ্ঞানের ডায়াগ্রাম অনুশীলন।
মানবিক বিভাগ: ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংক্ষেপে পড়া; বাংলা, ইংরেজি সাহিত্য ও ব্যাকরণে মনোযোগ।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ: হিসাববিজ্ঞান প্রয়োগভিত্তিকভাবে শেখা; অর্থনীতির গ্রাফ-চার্ট অনুশীলন; ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান চর্চা।
মানসিক প্রস্তুতি ও অনুপ্রেরণা
পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক শক্তি জরুরি। প্রতিদিন কয়েক মিনিট ধ্যান বা মেডিটেশন করলে মনোযোগ বাড়ে। মনে রাখতে হবে, ভর্তি পরীক্ষা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়; বরং এটি একটি ধাপ। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও পরেরবার সফল হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না।
প্রযুক্তির ব্যবহার
■ YouTube: বিনা মূল্যে লেকচার।
■ Khan Academy: গণিত-বিজ্ঞানের জন্য সহায়ক।
■ মোবাইল অ্যাপ: মডেল টেস্ট ও প্রশ্নব্যাংক।
বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলো খুব কার্যকর।
পড়াশোনার পরিবেশ
■ নিরিবিলি জায়গায় পড়া।
■ ডেস্কে অপ্রয়োজনীয় জিনিস না রাখা।
■ নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে পড়া।
■ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকা।
স্বাস্থ্য ও জীবনযাপন
■ প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম।
■ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
■ হালকা ব্যায়াম করা।
■ পর্যাপ্ত পানি পান করা।
ভুল এড়িয়ে চলা
■ শেষ মুহূর্তে পড়া শুরু করা।
■ শুধু পছন্দের বিষয় পড়া।
■ স্বাস্থ্য অবহেলা করা।
■ প্রশ্ন সমাধান না করে শুধু পড়া পড়া করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুধু একটি সাফল্য নয়; বরং নতুন যাত্রার সূচনা। তাই ভর্তি হওয়ার পরও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে—কোন বিষয়ে দক্ষ হতে চান, কোন ক্যারিয়ার গড়তে চান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা কাজে লাগাতে হবে দক্ষতা, উন্নয়ন, ভাষা শিক্ষা, নেতৃত্ব ও যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে।
ক্রাইম জোন ২৪