ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ভোলার পানচাষিরা


ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় মিষ্টি পান চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা। এই এলাকার মিষ্টি পানের খ্যাতি উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে। বিগত সময়ে দেশের বাইরেও এ পান রপ্তানি করা হয়েছে। বিশেষ করে, বিয়ে ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের অতিথি আপ্যায়নে এ মিষ্টি পান বিবেচিত হয়ে থাকে।
এ ছাড়া অনেকে বেড়াতে গেলে কয়েক বিড়া পান সঙ্গে নিয়ে যান প্রিয়জনদের বাড়িতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় অনেক কৃষক পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে পানের ভালো ফলনও হয়েছে। তবে বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
উৎপাদন খরচের তুলনায় পান বিক্রি করে তাঁরা যে দাম পাচ্ছেন, তা হতাশাজনক। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা সাধারণত আবাদি ও অনাবাদি জমিতে পান চাষ করেন। পান চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কৃষকেরা জানান, ৭২টি পানে এক বিড়া। ১২ বিড়া পানে এক পাই। তাঁদের কাছ থেকে পাইকারেরা পাই হিসেবে পান কিনছেন। একসময় তাঁদের উৎপাদিত এ পান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। তবে ৫ আগস্টের পর এ পান আর বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে না। এ ছাড়া পানের দাম কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ ছয় মাস পান উৎপাদন বেশি হয়। চলতি মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে পান চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন কৃষক পান চাষাবাদ করছেন। এর মধ্যে নীলকমল, নুরাবাদ, আহাম্মদপুর, এওয়াজপুর ও ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে পান চাষ বেশি হয়।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের পানচাষি লিটন বিশ্বাস জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে পান চাষ করেছেন। এতে তাঁর প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধার-দেনা করে প্রতিবছরই পান চাষ করছেন।
লিটন বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে খরচ পুষিয়ে লাভবান হয়েছি। অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। পান বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। তবে এই বছর এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার পান বিক্রি করে লোকসানে আছি। এদিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
নুরাবাদ ইউনিয়নের চাষি নিমাই বৈরাগী বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পান চাষাবাদ করে আসছি। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ একর জমিতে ৯৫০টি বরজে পান চাষ করছি। এক পাই পান যেখানে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই পান এখন ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। সার-ওষুধের দাম অনেক, খরচের সঙ্গে আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না।’
কৃষি অফিস বলছে, বর্ষার মৌসুমে পানের দাম কিছুটা কম থাকে। তবে শীত মৌসুমে পানের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষকেরা তখন তাঁদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে পানচাষিরা বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর দাম কিছুটা কম পেলেও আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
নাজমুল হুদা আরও বলেন, যদি পান বিদেশে রপ্তানি বাড়ানো যায়, তাহলে কৃষকেরা আশানুরূপ দাম পাবেন।
ক্রাইম জোন ২৪