ডিবির হারুনকে ‘জিন’ ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল: সাবেক আইজিপি মামুন


ডিবির হারুনকে ‘জিন’ ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল: সাবেক আইজিপি মামুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৯
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের যেকোনো ‘সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পারদর্শী’ হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদকে ‘জিন’ বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
তাঁর ভাষ্য, সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন হারুন। আন্দোলন দমন, সমন্বয়কদের আটক ও তাঁদের আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ প্রয়োগসহ নানা কর্মকাণ্ডে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হলে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই ধানমন্ডিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় কোর কমিটির বৈঠক হতো।
বৈঠকে তিনি ছাড়াও উপস্থিত থাকতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব টিপু সুলতান ও রেজা মোস্তফা, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, র্যাব মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধানেরা। সাবেক আইজিপির দাবি, এসব বৈঠকে আন্দোলন দমন ও সরকারের পক্ষে নানা নির্দেশনা দেওয়া হতো।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘কোর কমিটির এক বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজিএফআই ওই প্রস্তাব দেয়, আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমি রাজি হই। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে এসে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে এনে চাপ দেওয়া হয়। সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।’
এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন ‘অগ্রণী ভূমিকা’ পালন করে দাবি করে সাবকে আইজিপি বলেন, ‘ডিবিপ্রধান হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিন বলে ডাকতেন। কারণ, সে সরকারের নির্দেশনা পালনে পারদর্শী ছিল।’
চৌধুরী মামুন বলেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নজরদারি, তাদের অবস্থান নির্ণয় ও গুলি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়। হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। যার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ। পরে আন্দোলন দমনে সরাসরি লিথাল উইপন ব্যবহার করে এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লকরেইড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
ক্রাইম জোন ২৪