জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি: বদিউল আলম মজুমদার




জুলাই জাতীয় সনদ শহীদদের রক্তস্নাত। ছাত্র-জনতা দেশের মৌলিক সংস্কারের জন্য জীবন দিয়েছে। এ কারণে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা এবং একে আইনগত ভিত্তি দেওয়া দরকার।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আজ শনিবার বিকেলে ‘জুলাই সনদ: আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবায়ন’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই বৈঠকের আয়োজন করে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠান বা পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত করেছিল, সেই প্রতিষ্ঠান বা পদ্ধতিতে পরিবর্তন না এনে পুরোনো পদ্ধতিতে হেঁটে নতুন গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে না। ঐকমত্য কমিশন সেগুলো করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে মৌলিক সংস্কারের কথা বলছে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে বদিউল আলম বলেন, ‘জুলাই সংস্কার বাস্তবায়ন হলেই বোঝা যাবে এটা কার্যকর কি না। এখন আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত নিচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা একটা পথ খুঁজে পাব, যার মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে। আমরা একে একটা পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল বিভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। ৫ আগস্টের পর কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মৌলিক নীতি সবার একই হওয়া সত্ত্বেও কেন এই দূরত্ব? একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই সবার মূল লক্ষ্য, যেখানে থাকবে মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং বাক্স্বাধীনতা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন করতে চায় সরকার। কিন্তু এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও এখন জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এমনকি জুলাই সনদ নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, ‘আমরা অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড খুঁজতে পাগল হয়ে গেলাম। এর ফলে এ অভ্যুত্থানে জনগণের অংশগ্রহণগুলোকে বাতিল করা হলো।…এখন দেখি পিআর নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু পিআরের বাস্তবতা এখন আছে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা আছে। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেন নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।’

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘জুলাই সনদকে দেখতে হবে ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে। বাংলাদেশে আগামী গণ-অভ্যুত্থানের বীজ এই জুলাই সনদে লেখা হয়ে গেছে। ফলে সে বাস্তবতার নিরিখে এখন আমাদের জুলাই সনদের আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবায়নের বিষয় আলোচনা করতে হবে।’
রাজনৈতিক সংস্কার ও গণভোটের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তরুণ লেখক ও এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত বিরোধী দলের দৃষ্টিকোণ থেকে সংস্কারের কথা ভাবা। সংবিধান সংস্কার বলে কিছু নেই, হয় সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে অথবা সংশোধনী করতে হবে। সংসদ কেবল সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধনী করতে পারে, যা সংবিধানের ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেসব প্রস্তাব এসেছে, তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ছাপিয়ে গেছে।’
গোলটেবিলে জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের সদস্য, আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও আন্দোলনকর্মীরা বক্তব্য দেন।