নতুন ল্যাপটপ কিনতে বাধ্য করছে মাইক্রোসফট, মামলা করলেন উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারী


উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমের সমর্থন সেবা বন্ধ হবে অক্টোবরে। তবে এখনো লাখ লাখ ব্যবহারকারী তাদের পিসি বা ল্যাপটপ উইন্ডোজ ১১ আপগ্রেড করতে চাইছেন না। এমন এক ব্যবহারকারীর ক্ষোভ আদালত পর্যন্ত গড়াল। যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স ক্লেইন নামে এক ব্যক্তি মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মাইক্রোসফট পরিকল্পিতভাবে উইন্ডোজ ১০–এর সুরক্ষা আপডেট বন্ধ করে গ্রাহকদের নতুন ডিভাইস কিনতে বাধ্য করছে।
লরেন্স ক্লেইনের দুটি ল্যাপটপ আছে, যেগুলো উইন্ডোজ ১১ এ আপগ্রেড করা যাবে না। মামলায় তিনি দাবি করেছেন, মাইক্রোসফট এমন একটি অবস্থান নিয়েছে যাতে পুরোনো কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা চাপে পড়ে যান। তাঁর ভাষায়, ‘উইন্ডোজ ১০ বন্ধের সিদ্ধান্তটি মাইক্রোসফটের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ—গ্রাহকদের নতুন হার্ডওয়্যার কিনতে বাধ্য করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি গ্রহণে ঠেলে দেওয়া।’
মামলায় উল্লেখ করা হয়, যদিও উইন্ডোজ ১১ প্রথম বাজারে আসে ২০২১ সালে, তবে মাত্র গত মাসেই এটি উইন্ডোজ ১০–কে ছাড়িয়ে গেছে। জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখনো বিশ্বজুড়ে ৪৩ শতাংশ ডেস্কটপ ব্যবহারকারী উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন, যেখানে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করছেন ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ক্লেইনের মতে, আনুমানিক ২৪০ মিলিয়ন (২৪ কোটি) কম্পিউটার উইন্ডোজ ১১ চালাতে সক্ষম নয়। ফলে উইন্ডোজ ১০ বন্ধ করে দেওয়া মানেই এসব গ্রাহককে নতুন যন্ত্র কিনতে বাধ্য করা।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘মাইক্রোসফটের এ সিদ্ধান্ত তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি—যেমন উইন্ডোজ ১১–তে ডিফল্টভাবে থাকা ‘কোপাইলট’—চালানোর জন্য অনুকূল নতুন যন্ত্র বিক্রির একটি কৌশল।’
তবে মাইক্রোসফট সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, চাইলে গ্রাহকেরা ৩০ ডলার দিয়ে আরও এক বছর সিকিউরিটি আপডেট পেতে পারেন, যা ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। আবার চাইলে কেউ চাইলে উইন্ডোজ ব্যাকআপ ওয়ানড্রাইভে সিংক করিয়ে এক বছর ফ্রি আপডেট পেতে পারেন। এমনকি মাইক্রোসফট রিওয়ার্ড পয়েন্ট ব্যবহার করেও এক বছরের আপডেট কেনা যাবে।
ক্লেইনের দাবি, এসব সুবিধা অবশ্যই বিনা মূল্যে দেওয়া উচিত ছিল এবং যতদিন না উইন্ডোজ ১০-এর ব্যবহার নাটকীয়ভাবে কমে, ততদিন এই সুবিধা চালু রাখা দরকার। মামলায় বলা হয়, ‘মাইক্রোসফট কিংবা তাদের পার্টনার হার্ডওয়্যার নির্মাতারা (ওইএমএস) কখনো গ্রাহকদের বলেনি যে, এই অপারেটিং সিস্টেমের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে অতিরিক্ত খরচ বা ঝুঁকি আসতে পারে।
মামলায় ক্লেইনের আরেকটি বড় দাবি হলো—ভবিষ্যতে যেন মাইক্রোসফট এ ধরনের কৌশল না নেয়। তিনি চান, নতুন কোনো উইন্ডোজ লাইসেন্স কিনলে তার কত বছর আপডেট মিলবে, সেটি স্পষ্টভাবে আগে থেকেই জানানো হোক।
যদিও এর আগে এই ধরনের মামলার নজির খুব একটা নেই, তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা আগেই জানিয়ে দিচ্ছে—তাদের ফোনে কমপক্ষে কত বছর সফটওয়্যার আপডেট মিলবে।
মামলাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আপাতত যারা উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন, তাদের হয় প্রস্তুতি নিতে হবে অক্টোবরের পরে আর আপডেট না পাওয়ার জন্য, অথবা নতুন ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবতে হবে।
ক্রাইম জোন ২৪