বিশ্বে টেকসই পোশাকশিল্পে শীর্ষে বাংলাদেশ


বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত এক মাসে ১০টি কারখানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (লিড) সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গতকাল বুধবার একসঙ্গে পাঁচটি কারখানা নতুন সনদ অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সর্বাধিক এলইইডি সনদপ্রাপ্ত সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ২৫৮টি লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১০৯টি প্লাটিনাম, ১৩৩টি গোল্ড, সিলভার ১২টি এবং সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে ৪টি। গত বছর জুলাই মাসের শেষ দিকেও সব মিলিয়ে সনদপ্রাপ্ত কারখানা ছিল ২২৪টি। অর্থাৎ এক বছরে নতুনভাবে ৩৪টি কারখানা সনদ পেয়েছে, যার মধ্যে গত এক মাসে সংখ্যা বেড়েছে ১০টি।
নতুন সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকার রাইদা কালেকশন, ৯০ পয়েন্ট (প্লাটিনাম); আশুলিয়ার টিম গ্রুপের সাউথ অ্যান্ড সোয়েটারস, ৮৫ পয়েন্ট (প্লাটিনাম); চট্টগ্রামের কেডিএস ফ্যাশন, ৮৪ পয়েন্ট (প্লাটিনাম); সিরাজগঞ্জের পূর্বাণী ফ্যাশন লিমিটেড, ৮৩ পয়েন্ট (প্লাটিনাম) এবং গাজীপুরের একটি কারখানা, ৭০ পয়েন্ট (গোল্ড)।
এর আগে গত ২০ জুলাই লিড সনদ পায় ৩টি কারখানা ও এবং ৯ জুলাই সনদ পায় দুটি কারখানা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল্লাহ হিল নকিব বলেন, ‘টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই টেকসই প্র্যাকটিস, উদ্ভাবন এবং শ্রমিক ও কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। এই প্র্যাকটিস থেকেই মূলত দেশে লিড সনদের আগ্রহ বেড়েছে মালিকদের। আমরা সব সময় ব্যবসার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছি। এলইইডি সনদ অর্জন আমাদের পরিবেশবান্ধব অঙ্গীকারের প্রমাণ।’
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানিসাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার, টেকসই ব্যবস্থাপনা, ভবনের নকশা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল, শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশসহ বিভিন্ন সূচক বিবেচনা করে লিড সনদ দেওয়া হয়। মোট ১১০-এর মধ্যে যেসব কোম্পানি ৮০ বা তার চেয়ে বেশি নম্বর পায়, তারা প্লাটিনাম সনদ লাভ করে। কোনো কারখানা ৬০ থেকে ৭৯ নম্বর পেলে গোল্ড সনদ পায়, ৫০ থেকে ৫৯ পেলে পায় সিলভার সনদ এবং ৪০ থেকে ৪৯ পেলে পায় সার্টিফায়েড সনদ। দেশের সবুজ সনদ পাওয়া ৬২ কারখানা রয়েছে বিশ্বের ১০০ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া কারখানার মধ্যে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, লিড সনদ শুধু যে সুনাম ও ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায়, তা নয়, অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। সবুজ কারখানাগুলো পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজের জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে। দীর্ঘ মেয়াদে সবুজ কারখানাগুলো বিভিন্ন উপায়ে জ্বালানি বিল হ্রাস, পানির খরচ কমানো এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খরচ কমাতে পারে। এসব কারখানার পণ্যগুলোর চাহিদা বিশ্ববাজারে বেশি; কারণ, পরিবেশ সচেতনতা দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে নতুন বাজার সৃষ্টি এবং রপ্তানি আয়ে উন্নতি হতে পারে। সবুজ কারখানার প্রতি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হন; কারণ, তাঁরা টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বর্তমানে যেখানে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক শুল্ক এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের পোশাক খাতের জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে, সেখানে উদ্যোক্তাদের টেকসই অবকাঠামোতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে একটি দূরদর্শী ও সাহসী সিদ্ধান্ত।’
ক্রাইম জোন ২৪