মিয়ানমারে শিগগির শান্তি মিশন পাঠাবে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া


মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য শান্তি স্থাপন ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক কয়েকটি দেশ যৌথভাবে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই ঘোষণা দেন। খবর সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এশিয়া ওয়ানের।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের অগ্রাধিকার। একই সঙ্গে প্রথমে শরণার্থী ও ভূমিকম্পের শিকার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি।’ মালয়েশিয়ার এই শীর্ষ নেতা জানান, আসন্ন সপ্তাহগুলোতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে মিয়ানমারে শান্তি ও মানবিক মিশনের কাজ শুরু হবে।
মিয়ানমারে ঘটে চলা সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নিরন্তর সহিংসতা ও শিকারের কারণে গত ১৮ মাসে আরও প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
বাংলাদেশে এই বিশাল শরণার্থী বোঝা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর এই বিশাল মানবিক বোঝা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। তাই আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করব।’
এই ঘোষণার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বর্তমানে তিন দিনের সরকারি সফরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূসের এই সফরে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিগুলো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), পেট্রোলিয়াম পণ্য ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সরবরাহ নিয়ে। এই উদ্যোগ দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিমের এই উদ্যোগে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর স্পষ্ট সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থার উন্নয়ন ও তাদের জন্য আরও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে এই আঞ্চলিক উদ্যোগকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারে সংঘটিত ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও সহায়তা প্রদান করা হবে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিপাত ও পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর যৌথ পদক্ষেপ এই সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ক্রাইম জোন ২৪