গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ সবাই ‘জাতীয় বীর’—জুলাই ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার


বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বাকবদল ঘটানো জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ সবাই ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে মর্যাদা পাবে। আর শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা ও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে। সদ্য ঘোষণা করা জুলাই ঘোষণাপত্রে এসব অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এক বছর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে আজ মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় রাজনৈতিক নেতাদের পাশে নিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
জুলাই ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো। বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি অঙ্গীকার করে এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।’
গণঅভ্যুত্থানের এই ঐতিহাসিক দলিল পড়ে শোনাতে বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার মঞ্চে উপস্থিত হন। জাতীয় সঙ্গীতে শুরু হয় জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবারের সদস্য সাবরিনা আফরোজ সেমন্তী।
২৮ দফার জুলাই ঘোষণাপত্রে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলের বঞ্চনা কথা, স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশে আশাভঙ্গের বেদনা, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, ২০০৭ সালের এক–এগারোর ঘটনা এবং আওয়ামী লীগের দেড় দশকের বেশি সময়ের শাসনামলে সংবিধানবিরোধী ও মানবতাবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার সময় মঞ্চে প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন— বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জু, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের, জেএসডির সহ সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম।