শিরোনাম
মাত্র ৪ কোটিতে তৈরি কন্নড় সিনেমা ১২ দিনে আয় করল ৫০ কোটিজাককানইবিতে সাংবাদিককে মারধরের হুমকি দিলেন ছাত্রদল নেতাবাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারিজমি দখল করা যাযাবরদের তাড়াতে ট্রাকভর্তি মল ছিটালেন কৃষকেরা‘বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের এভাবে হেরে যাওয়া উচিত হয়নি’শীতলক্ষ্যায় জেগে ওঠা চর থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দোকানপাট ভেঙে দিল প্রশাসনআবু সাইদ হত্যা মামলায় ৩০ আসামির বিচার শুরুসপ্তাহান্তে তৈরি করুন মজাদার মরোক্কান স্যুপ হাড়িরা‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করলেন রিকশাচালক দলের নেতা, বিতর্কসেকেন্ডহ্যান্ড নাকি রিফারবিশড আইফোন, কোনটি কিনবেন

জীবনের গল্পই তো সিরাজের নিরন্তর অনুপ্রেরণা

জীবনের গল্পই তো সিরাজের নিরন্তর অনুপ্রেরণা

মাত্রই শেষ হওয়া অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার সিরিজে ১৮৫.৩ ওভার বল করেছেন মোহাম্মদ সিরাজ; যা এই সিরিজে যেকোনো বোলারের চেয়ে বেশি। পেসাররা সাধারণত দৌড়ে এসে জোরের ওপর বল করেন। তাই একজন স্পিনারের চেয়ে বেশি ক্যালরি পোড়াতে হয় পেসারদের। কিন্তু এই সিরিজে সবচেয়ে বেশি ক্যালরি খরচ করতে হয়েছে মোহাম্মদ সিরাজকে।

তার চেয়ে বড় কথা, প্রতিটি স্পেলেই নিজের বোলিংয়ের মানদণ্ড ধরে রেখে বল করেছেন তিনি। একই গতিতে বল করে গেছেন নিয়ত। দুর্দান্ত ফিট না হলে ধারাবাহিকভাবে একই গতিতে বল করা অসম্ভব! তো কীভাবে নিজেকে সুপার ফিট করে তুলে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন সিরাজ? তাঁর ভাই মোহাম্মদ ইসমাইল শুনিয়েছেন এমন ফিটনেসের পেছনে সিরাজের ত্যাগের গল্প।

হায়দরাবাদে গেছেন আর বিরিয়ানি খাননি, এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। অথচ হায়দরাবাদে বাস করলেও এখন বিরিয়ানি পাতে তোলেন না সিরাজ। তাঁর ভাই ইসমাইল বললেন, ‘ফিট থাকার জন্য ও অনেক পরিশ্রম করেছে। বাইরের খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। হায়দরাবাদে থাকলেও খুব কমই বিরিয়ানি খায়। কখনো খেলেও সেটি বাড়িতে রান্না করা।’ শুধু কি বিরিয়ানি? ইসমাইল বললেন, ‘পিৎজা, ফাস্ট ফুডেও এখন অরুচি তাঁর।’

তবে এই অভ্যাস এক দিনে হয়নি। এর পেছনে রয়েছে তাঁর বাবা মোহাম্মদ গাউসের প্রেরণাও। সামান্য একজন অটোচালক ছিলেন গাউস, সব সময় যিনি স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর ছেলে ভারতের জার্সি গায়ে ক্রিকেট খেলবে। ২০২১ সালে তিনি যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে, তখন মারা যান সিরাজের বাবা। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি। তবে নিজের ফিটনেস নিয়ে তখনো এতটা ‘সিরিয়াস’ ছিলেন না তিনি। যতটা হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের দল থেকে বাদ পড়ার পর। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে নিজেকে দেখতে না পেয়ে ভেঙে পড়েননি; বরং নতুন প্রতিজ্ঞায় নিজেকে গড়ে তুলে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। শুরু হয় নতুন উদ্যমে পরিশ্রম। ভাই ইসমাইল বললেন, ‘ও হার মানতে জানে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা না পেলেও হতাশ হয়নি। উল্টো আরও পরিশ্রম করেছে। জিমে গেছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। এখন তারই ফল পাচ্ছে।’

গতি ধরে রেখে লম্বা স্পেলে বল করতে পারছেন। মাত্রই শেষ হওয়া সিরিজে শুধু বেশি ওভার বলই করেননি সিরাজ, সবচেয়ে বেশি ২৩ উইকেটও নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে এত বেশি উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে শুধু আর একজনেরই—জসপ্রীত বুমরা। ২০২১-২২ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও বুমরা ঠিক ২৩ উইকেটই নিয়েছিলেন। তবে বুমরা সেই সিরিজে বল করেছিলেন সিরাজের চেয়ে বেশি—১৮৭ ওভার।

ওভালে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট। এতেও একটা কীর্তি গড়েন তিনি, যা আর কোনো ভারতীয় পেসারের নেই। সেটি কী! ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে ইংল্যান্ডের অন্তত ৪ ব্যাটারকে ৭ বার করে আউট করেছেন। যে নজির শুধু ভারত কেন, নেই এশিয়ার আর কোনো বোলারের।

বাবা গাউস মারা যাওয়ার পর প্রতিটি ক্রিকেট সফরের আগে বাবার কবর জিয়ারত করেন সিরাজ। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগেও ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু বাবার কবর জিয়ারতই নয়, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে দোয়া চান মায়ের কাছেও। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগেও মা শাবানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘আম্মি, আমার জন্য দোয়া কোরো, আমি যেন ভালো খেলতে পারি, যেন ভারতকে জিতিয়ে দিতে পারি।’ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে শাবানা বলেন, ‘সে তার আব্বুকে অনেক ভালোবাসত। আমি সব সময় ওর জন্য দোয়া করি। আল্লাহ আমার বাচ্চাকে সবকিছুতেই সফল করুক।’

graph

ইসমাইল বললেন, তাঁর বাবার চাওয়া ছিল, সিরাজ একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। ইসমাইলের ভাষায়, ‘আব্বু বলতেন, “একদিন তুই অনেক বড় নাম করবি, ভারতের হয়ে খেলবি। ” যখন আব্বু মারা গেলেন, তখন সিরাজ ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু আম্মি বলেছিলেন, ‘যা হবার হয়ে গেছে, এখন খেলার দিকে মন দাও।’”

বাবার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতেই নিজেকে সুপার ফিট হিসেবে তৈরি করে তোলা সিরাজের। ভাই ইসমাইল বললেন, ‘সিরাজ সব সময় বলে, ‘আব্বুর জন্য খেলতে হবে, তাঁর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’ এখন ওর ফিটনেস অন্য লেভেলে।’

আজকের সিরাজ হয়ে ওঠার পেছনে হাত আছে বিরাট কোহলিরও। সিরাজ আগ্রাসন, ক্ষুধা—সবই বিরাটের কাছ থেকে পাওয়া জানিয়ে ইসমাইল বলে গেলেন, ‘২০১৮ সালের আইপিএলটা যখন সিরাজের খারাপ কেটেছিল, তখন অনেকে ওকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু বিরাট ভাইয়া পাশে ছিলেন। ঝুঁকি নিয়ে ওর ওপর ভরসা রেখেছিলেন, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সিরাজ নিজেই বলেছে, ওর ক্যারিয়ারের সবকিছু বিরাট ভাইয়ার জন্য।’ আজ যখন সিরাজের অর্জনে গর্বিত গোটা ভারত, তখন কোহলির গর্বটা তো একটু বেশিই হওয়ার কথা!



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button