ট্রেনে পাথর ছোড়ার ভিডিও ভাইরাল, চুপ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ


প্ল্যাটফর্ম থেকে ধীরগতিতে বের হচ্ছে একটি ট্রেন। সামনে পাথর হাতে দাঁড়িয়ে এক তরুণ। তিনি চালককে বারবার বলছেন, ‘ব্রেক ধরেন’। তারপরও ট্রেনটি এগিয়ে যেতে থাকলে হাতের পাথর ট্রেনে ছুড়ে মারেন ওই তরুণ। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে আজ মঙ্গলবার সকালের এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
ট্রেনে পাথর ছোড়ার ব্যাপারে ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় শাস্তির বিধান আছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথাও বলা আছে। পাথর নিক্ষেপের কারণে কোনো যাত্রী মারা গেলে ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান আছে। আর পাথর নিক্ষেপকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তার অভিভাবকের শাস্তির বিধান আছে। তবে এই পাথর নিক্ষেপ নিয়ে চুপ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাবরী চুলের ওই তরুণের পাথর নিক্ষেপের পর ট্রেনটি থেমে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর ট্রেনটি আবার চলতে শুরু করলে ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই তরুণ চালককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই দাঁড়ান। দাঁড়ান, দাঁড়ান, দাঁড়ান।’ পরে ট্রেনটি থেমে যায়।
ট্রেনে এভাবে প্রকাশ্যে পাথর নিক্ষেপের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘পাথর নিক্ষেপের ভিডিওটি আমিও দেখেছি। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু ট্রেন তো বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ। এটা তাদের ব্যাপার। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করলে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বললেই ভালো হয়,’ বলেন ওসি।
যোগাযোগ করা হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরাও ভিডিওটা দেখেছি, কিন্তু সরেজমিনে বিশ্লেষণ করা হয়নি। আমরা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি। ভিডিওটি যদি সত্য হয়, তাহলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।’ প্রকাশ্যে অনেকের সামনে এমন ঘটনা ঘটার পরেও আইনি ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলব। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বিরুদ্ধে তো আমরাও সোচ্চার। দুষ্কৃতকারীরা এটা করে থাকে। এটা ফৌজদারি অপরাধ।’
উল্লেখ্য, জুলাই যোদ্ধাদের ঢাকা যাওয়ার জন্য ভাড়া করা বিশেষ ট্রেন পছন্দ না হওয়ায় আজ সকালে তাঁদের একাংশ রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ করে। বরাদ্দ করা ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলে ওই তরুণ পাথর নিক্ষেপ করে সেটিকে থামিয়ে দেন। পরে কয়েকজন রেললাইনের ওপর বসে পড়েন। কেউ আবার শুয়ে পড়েন। এতে প্রায় ৪৫ মিনিট ট্রেনটি আটকে থাকে। জুলাই যোদ্ধারা বনলতা ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো আন্তনগর ট্রেন চাচ্ছিলেন। বরাদ্দ করা বিশেষ ট্রেনটি ছিল একটি সাধারণ ট্রেন। এই ট্রেন নিয়ে আপত্তির মুখে পড়ে ৩৫ জনকে রেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থায় সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আর অন্য সবাই আগের বরাদ্দ করা ট্রেনেই ৪৫ মিনিট পর ঢাকায় রওনা দেন।
এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা ওই তরুণ। তিনি বলেন, ‘বড় বড় নেতা যাঁরা আছেন, তাঁরা হেলিকপ্টারে যাওয়া-আসা করেন। আর আমরা জুলাই যোদ্ধাদের কোনো দাম নাই? যাঁদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদেরকে এ রকম বাজে একটা ট্রেন দিয়েছেন। সেন্ট্রাল থেকে তাঁরা যখন যাত্রা করেন, বিভিন্ন জায়গায় যান, তাঁরা কত ভালো ভালো গাড়িতে, হেলিকপ্টার-বিমানে যাতায়াত করেন। আমাদের কেন এমন ট্রেন?’