সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘ফাউল’ আচরণ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়, অভিযোগ সাংবাদিক নেতাদের


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর হলেও সংবাদমাধ্যমের সংস্কার ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এই এক বছরে বারবার সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘ফাউল আচরণ’ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের বর্ষপূর্তিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ সমাবেশে তাঁরা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করেন।
আন্দোলনে নিহত ছয় সাংবাদিকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে হাসিনা পালিয়ে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম, নতুন একটা রাষ্ট্র গঠন করব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই জন-আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি। গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন ফাউল করেছে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে দ্বিতীয় ফাউল করেছে। এসব ফাউলের জবাব দিতে হবে তথ্য উপদেষ্টাকে। হাসিনা সরকারের যে পরিণতি হয়েছে, তা আপনাদেরও হবে।’
গণমাধ্যম সংস্কার কেন করা হয়নি—সেই প্রশ্ন রেখে ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে এখনো অস্থিরতা চলছে। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। আপনারা যদি সাংবাদিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ না করেন, তাহলে আমরা কর্মসূচি দেব।’
সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, ‘আজ আনন্দ ও বেদনার দিন। ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। গণতন্ত্র সুরক্ষা ও ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, এটাই ঠিক। আমি জানি না, রাজনৈতিক দলগুলো কেন নীরব। ভারতীয় চ্যানেল কেন বন্ধ হচ্ছে না? কিছু কিছু উপদেষ্টার অপরিপক্কতা ও অজ্ঞতা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। কোনো অন্তর্বর্তী সরকার এত দিন ক্ষমতায় ছিল না। আমরা চাই, দ্রুত নির্বাচন দেবে সরকার।’
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের জন্য গঠিত হয়েছে। এই ট্রাস্টের অন্যায্য কাজ আমরা মেনে নেব না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা কাদেরকে প্রোমোট করছে, জাতি জানে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সাংবাদিকেরা যখন রাস্তায় নেমে পড়বে, তখন কারও ঠাঁই হবে না।’
সাইবার সিকিউরিটি আইনের সমালোচনা করে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘কালো আইন সাইবার সিকিউরিটি আজও বাতিল করা হয়নি। এটা বড়ই দুঃখজনক। হাসিনার সময়ে গুম-খুন হয়েছে। এখন মব চলছে। ১৭ বছর ধরে আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমরা চাই নির্বাচিত সরকার। কিন্তু সংস্কারের মুলো ঝুলিয়ে এক বছর হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আমরা পাইনি।’
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে ক্রোড়পত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটি গণমাধ্যমের জন্য অত্যন্ত খারাপ পরিস্থিতি। আমরা ১/১১ আসতে দেব না। আওয়ামী দোসরেরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ঠাঁই নিয়েছে।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নেতা আরফানুল আইন, মুরসালীন নোমানী, আবু সাহেহ আকন, নিজাম উদ্দিন উদ্দিন দরবেশ, আব্দুল্লাহ মজুমদার, খন্দকার আলমগীর হোসেন, কবি রফিক মাহমুদ প্রমুখ।