যাদের জনসমর্থন নেই তারাই পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে: আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের


গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তারাই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মাস্তানি আর অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চান।’
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জামায়াতের ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখা আয়োজিত গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সব নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপক ভিত্তিক রিগিং, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত, এসব ছিল ভুয়া ও নির্বাচনের নামে প্রহসন। তাই দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অপরাধ থাকবে না, ভোট চুরি ও কেন্দ্র দখল হবে না। থাকবে না টাকার খেলা। মূলত, যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তাঁরাই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মাস্তানি ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাঁদের সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি আমরা মেনে নেব না।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে এ জামায়াত নেতা বলেন, ‘জনগণের রক্তের ওপর দিয়েই জুলাই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাঁদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আপনি এখন ক্ষমতায়। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তাই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। আর দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাঁরা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।’
তাহের বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর আওয়ামী-বাকশালিরা দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তারা আবার দৃশ্যপটে ফিরে আসার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না। যারা নতুন করে স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরও জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’

তিনি অতীতের অপশাসন-দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগের শাসনামল দেখেছি। কিন্তু মানুষের মুক্তি মেলেনি। জনগণ তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা পায়নি। আপনারা যদি আমাদের এক বার সুযোগ দেন এবং আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে আমরা ৫৪ বছরের ইতিহাসই বদলে দেব।’
সভাপতির বক্তব্যে দলের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সে সনদে জনপ্রত্যাশার বাইরে কিছু থাকলে তা দেশপ্রেমিক জনতা কোনো ভাবেই মেনে নেবে না। শুধু ঘোষণা নয় বরং তা নির্বাচনের আগেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতেই।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সমাবেশ শেষে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গণমিছিলটি মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় এসে শেষ হয়।