শিরোনাম

সংস্কারের অনিশ্চয়তায় রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি দেখছে টিআইবি

সংস্কারের অনিশ্চয়তায় রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি দেখছে টিআইবি

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব গত এক বছরে অনেক বেশি বেড়েছে। তথ্য প্রকাশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখনো বাধার মুখে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে নারীর অধিকার, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে, যা বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকারনাইন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারে তথ্য প্রকাশে সমন্বয়হীনতা ও গোপনীয়তার প্রবণতা রয়েছে। ভারতের অবন্ধুসুলভ আচরণের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সংকট ও তার ফলে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত।

টিআইবি মনে করে, রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান ও তথ্য প্রকাশে ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অবন্ধুসুলভ আচরণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ; সীমান্তে হত্যা ও ‘পুশইন’ অব্যাহত; বাণিজ্যে বাধা আরোপ; কূটনৈতিক টানাপোড়েন; শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোও সরকারের ঘাটতি বলে মনে করে টিআইবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানে হত্যায় জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। সরকার পতন-পরবর্তী ১১ মাসে সারা দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭৬১টি মামলায় আসামি ১ হাজার ১৬৮ পুলিশ। এর মধ্যে ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী, হত্যার ইন্ধনদাতা ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে মামলা হয়েছে। দায়ের হওয়া মামলা ১ হাজার ৬০২টি (হত্যা মামলা ৬৩৮ টি)। এসব মামলায় পতিত সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আনুমানিক ৮৭ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। ৭০ শতাংশ মামলার তদন্তে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ রয়েছে। ৬০-৭০টি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে।

এক বছর হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগ এসেছে ৪২৯টি এবং মামলা ২৭টি। শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের আগেই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে ধীর গতি আছে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের বিচারপ্রক্রিয়া চলমান।

এক বছরের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অব্যাহত রয়েছে খুন, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, আন্দোলন, লুটপাট, অরাজকতা। আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা (মব জাস্টিস’)—গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢালাওভাবে মামলায় আসামি হিসেবে নাম দেওয়া, গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপ বাড়লে গ্রেপ্তার বৃদ্ধির অভিযোগ বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু অব্যাহত আছে। আন্দোলন দমন করতে পুলিশের কার্যক্রমে বৈষম্য-কোনো পক্ষের প্রতি নমনীয় মনোভাব, কোনো পক্ষের ওপর নির্যাতন হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো নিয়ে বৈষম্য আছে। প্রথম গঠিত কমিশনগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হলেও পরে গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ গুরুত্ব পায়নি।

জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য সত্ত্বেও যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর সাংবিধানিক ও আইনগত বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটি এখনো অনিশ্চিত। ফলে সংস্কারের আশায় ধাক্কা লাগতে পারে এবং রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করে টিআইবি।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button