টাকার জন্য নয়, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই


প্রশ্ন: ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দিয়ে আপনার কোচিং-অধ্যায় শুরু হয়েছে। এবার এনসিএলে বরিশালের কোচ হয়েছেন। যদিও এনসিএলে হাই প্রোফাইল বা বড় নাম সাধারণত দেখা যায় না।
মোহাম্মদ আশরাফুল: ঠিক। আমি যখন খেলতাম, তখন মনে হয়েছে, যদি কোচিংয়ে আসি, অবশ্যই আমার এনসিএলে কাজ করা উচিত। যেহেতু প্রথম শ্রেণির ম্যাচ…আমাদের দেশের বড় কোচ যেমন সালাহ উদ্দীন ভাই বলেন, খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই বলেন, তাঁরা বিপিএল আর ঢাকা লিগেই করেন। কিন্তু তাঁরা গত ২৫ বছরে এনসিএলে কাজ করেননি। এতে আমাদের ক্ষতিই হয়েছে বলে মনে করি। তাঁরা যদি আগে এখানে কাজ করতেন (এনসিএলে কোচিং), তাহলে আমাদের সব কাঠামোর উন্নতি হতো। আপনি দেখুন, এনসিএলে যাঁরা কোচিং করান, ৪৫ দিন কোচিং করিয়ে প্রধান কোচের বেতন ৪০ হাজার, ৫০ হাজার টাকা…। এ কারণে আমাদের স্ট্যান্ডার্ডটা ওরকম হয় না। তো মনে হয়েছে, ক্রিকেটের এই জায়গায় ভালো মানের কোচ দরকার। আপনি যদি বাইরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কোচদের দেখেন; যেমন আমি দুই দিনের জন্য (ইংল্যান্ডে) ডার্বিশায়ারের সঙ্গে কাজ করলাম। মিকি আর্থার এখানে প্রধান কোচ। ডেভ হোয়াটমোরের ভারতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সঙ্গে দু-তিন বছরের চুক্তি থাকে। তো সেই জায়গা থেকে মনে হয়েছে, যেহেতু আমি কোচিং করাব, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কাজ করার ইচ্ছা আগে থেকেই ছিল। এ কারণেই ফোন দিয়েছিলাম আকরাম (খান) ভাই, (হাবিবুল বাশার) সুমন ভাইকে। তাঁদেরকে ফোনে জানিয়েছিলাম, আমি করতে (কোচিং) চাই, যদি অপশন থাকে। যেহেতু বরিশালে আমি খেলেছি, তাদের সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
প্রশ্ন: ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোচদের পারিশ্রমিক আকর্ষণীয় নয়। আফতাব আহমেদ-রাজিন সালেহদের মতো কোচরা কাজ করতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। বিসিবির এখানে কী কী পরিবর্তন করা উচিত?
আশরাফুল: (বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম) বুলবুল ভাই এসেছেন। আশা করি, তিনি এটা খেয়াল করবেন। কারণ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রধান কোচ থাকেন। অন্তত ক্রিকেটাররা যে ম্যাচ ফি পায়, সেই ফি দিলে ভালো। এই যে সুজন ভাই, সালাহ উদ্দীন ভাইয়েরা এই কাজগুলো যদি করতেন, তাহলে হয়তো এটা পরিবর্তন হতো। তাঁরা তো বড় মানের কোচ। তাঁরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এলে এই কাঠামো বদলে যেত। আশা করি, আকরাম ভাইয়েরা হয়তো এটা বিবেচনা করবেন। আগে যেমন (ইসমাইল হায়দার) মল্লিক ভাইদের বলতে শুনেছি, কোচরা তো বেতন পান ক্রিকেট বোর্ডে। এ কারণে টাকা দিতে চাইতেন না। কোচদের আমরা যদি মূল্যায়ন না করি, তাহলে আফতাব-রাজিনরা কাজ করেছেন, চলেও গেছেন। যদিও আমার চলে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। টাকার জন্য আসিনি। অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। আপনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কোচ হবেন, এটা তো অনেক বড় গর্বের বিষয়।
প্রশ্ন: শুনেছি, কোচ হওয়ার পর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে। তিনি কী বললেন?
আশরাফুল: হ্যাঁ, বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বরিশালে খেলেছি তিন বছর; তবে মানসম্মত ক্রিকেটার কম। সেখানে দেখেছি, আগে চাপ আসত। যখন আমি তিন বছর খেলেছি, আলো (বরিশাল থেকে নির্বাচিত প্রয়াত পরিচালক আলমগীর হোসেন) আঙ্কেল ছিলেন বোর্ড পরিচালক। বরিশালের স্থানীয় ক্রিকেটাররা চাপ দিত কাউন্সিলরদের দিয়ে। বুলবুল ভাই ওটাই বললেন, ‘ভালো করার চেষ্টা করিস।’ আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। জাতীয় লিগ খেলার সময় দেখেছিলাম, কোচের মান আরও ভালো হওয়া উচিত। ওই জ্ঞানটুকু থাকা দরকার যে একটা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোনো ব্যাটারের কতটুকু হিট করা উচিত। একটা মৌসুম বরিশালে খেলতে গেলাম। তিন দিনের অনুশীলন ছিল আমাদের। একদিন (নেটে) খেললাম ৪০ বল, আরেক দিন ৩০ বল, আরেক দিন খেললাম ২৫ বল। এই অনুশীলনের পর আমার কাছ থেকে চাইছেন, ১০০-২০০ রান করব। এসব বিষয় পরিবর্তনের চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: যখনই বরিশালের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তখনই দলটির অভ্যন্তরীণ নানা বিশৃঙ্খলার খবর শোনা যাচ্ছে। এসব ঠিক করা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?
আশরাফুল: আমার জন্য কঠিন হবে না। কারণ, এই দলের সঙ্গে আমি খেলেছি। ক্রিকেটারদের চিনি। তাদের সঙ্গে আমি খেলেছি। দুই বছর আগেও তাদের সঙ্গে খেলেছি। আমার মনে হয় না অত সমস্যা হবে।