শ্রোতার মন টানতে চাইলে গল্প বলুন


বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ শুধু দক্ষতা নয়, এটি একধরনের শক্তি। আপনি হয়তো একটি টিম পরিচালনা করছেন, পণ্যের উপস্থাপনা করছেন কিংবা চাকরির ভাইভা দিচ্ছেন। যেটাই করুন না কেন, সেখানে আপনার কথা বলার ধরন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কীভাবে কথা বলছেন, সেটাই ঠিক করে দেয় আপনি কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন। এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জানেন বিল ম্যাকগোয়ান। তিনি এমি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত টিভি সাংবাদিক ও বেস্টসেলিং লেখক। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি ও ব্যক্তিরা তাঁর কাছ থেকে শিখছেন কীভাবে শ্রোতাকে মুগ্ধ করতে হয়। অ্যামাজন, মেটা, লিংকডইন, স্পটিফাই, এমনকি সুপারবোল ও অলিম্পিকজয়ীরাও তাঁর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তাঁর বই ‘স্পিক, মেমোরেবলি: দ্য আর্ট অব ক্যাপটিভেটিং অ্যান অডিয়েন্সে’ তিনি তুলে ধরেছেন কীভাবে সহজ, সংক্ষিপ্ত ও গল্পভিত্তিক উপস্থাপনা মানুষকে আকর্ষণ করে এবং মনে গেঁথে থাকে।
গল্পই কেন বেশি মনে থাকে?
ম্যাকগোয়ান জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘২০/২০’-তে সাংবাদিক ছিলেন। সে সময় প্রতি মিনিটে দর্শক রেটিং দেখানো হতো। দেখা যেত, যখন কোনো উপস্থাপক গল্প বলতেন, তখনই দর্শকদের আগ্রহ বেড়ে যেত। তাঁর উপলব্ধি ছিল—সংখ্যা বা পরিসংখ্যানের তুলনায় গল্প মানুষের মনকে বেশি ছোঁয়। কারণ, গল্প একসঙ্গে আবেগ, দৃশ্য ও মানবিকতা বহন করে।
মনে থাকে শুরুর ও শেষের কথা
ম্যাকগোয়ান বলেন, মনোবিজ্ঞানে একটি বিষয় আছে—‘প্রাইমারি-রিসেন্সি ইফেক্ট’। অর্থাৎ, মানুষ সাধারণত শুরু ও শেষের কথা বেশি মনে রাখে। তাই যদি আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে চান, সেটা রাখুন উপস্থাপনার শুরু বা শেষের দিকে। বক্তব্যের মাঝখানে রাখলে তা হারিয়ে যেতে পারে।
কথা বলার ‘পাস্তা সস’
যেমন টমেটো সস ৩ ঘণ্টা চুলায় ৎ করেন—‘পাস্তা সস প্রিন্সিপল’। যেমন টমেটো সস ৩ ঘণ্টা চুলায় রেখে কমিয়ে আনলে তা হয় গাঢ় ও সুস্বাদু। কথা বলাও তেমন—যত বেশি ঘনীভবন, তত বেশি কার্যকর। তিনি বলেন, ‘ছাঁকুনি দিয়ে বলুন। বেশি বললে শ্রোতা ক্লান্ত হয়ে যাবে। কথা ছোট করুন, কিন্তু অর্থে পূর্ণ হোক।’
ভার্চুয়াল ক্লান্তি ও ‘জুমনেশিয়া’
রিমোট কাজ ও ভার্চুয়াল মিটিং এখন দৈনন্দিন বাস্তবতা। এর সঙ্গে এসেছে নতুন ধকল জুম ফ্যাটিগ, অর্থাৎ ভার্চুয়াল মিটিংয়ের ক্লান্তি। তবে ম্যাকগোয়ান বলেন, আরও বিপজ্জনক হলো ‘জুমনেশিয়া’। যখন মানুষ একঘেয়ে পরিবেশে একের পর এক মিটিং করে, কোনো নতুন দৃশ্য বা সংকেত ছাড়াই। ফলে মস্তিষ্ক তথ্য ধরে রাখতে পারে না। এই অবস্থায়, চিন্তাশীল ও পরিকল্পিত উপস্থাপনাই হতে পারে শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখার উপায়।
কীভাবে কথা বললে তা মনে থাকবে?
- কম বলুন, চিন্তাভাবনা করে বলুন
- গল্প বলুন তথ্য ও আবেগ দিয়ে
- শ্রোতার কল্পনায় দৃশ্য তৈরি করুন
- জটিল পেশাগত শব্দ (জার্গন) এড়িয়ে সহজ ভাষা ব্যবহার করুন
- গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি শুরু ও শেষে রাখুন
ম্যাকগোয়ান বলেন, ‘মানুষের মাথায় সব সময় একটা মুভির রিল ঘুরছে। আপনি যদি তাঁদের কল্পনার জন্য কোনো দৃশ্য না দেন, তাহলে তাঁরা নিজের মতো ছবি বানাতে শুরু করেন, আর তখনই মন অন্যদিকে চলে যায়।’
পরামর্শ
আপনি টেড টক দিচ্ছেন, অফিস মিটিংয়ে কথা বলছেন, কিংবা ক্যারিয়ারে নিজেকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন—এই পরামর্শগুলো আপনার জন্য প্রযোজ্য। আপনার কথা যেন শুধু শোনা না হয়, মনে গেঁথে থাকে—সেটাই ম্যাকগোয়ানের মূল শিক্ষা। তাই মনে রাখুন, ভাবুন, ছাঁকুন, বলুন। আর অবশ্যই, গল্প বলুন। কারণ, ভালো গল্প মানেই মনে থাকার মতো কথা।
সূত্র: ফোর্বস