জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত কেশবপুর, আশ্রয় সড়কের পাশে


টানা বর্ষণ ও নদ-নদীর পানি উপচে যশোরের কেশবপুরে হরিহর নদ বিপৎসীমার দুই ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পৌরসভার মধ্যকুলসহ কয়েকটি এলাকার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট অচল হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধ মানুষগুলো এখন সড়কের পাশে টংঘর তুলে আশ্রয় নিচ্ছে।
জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন নদ-নদীর পলি ভরাট ও অপরিকল্পিত মাছের ঘের, যা পানি নিষ্কাশনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যকুল সরদারপাড়ায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, তলিয়ে গেছে চলাচলের একমাত্র পথ। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়া খ্রিষ্টান মিশনের পাশের সড়কেও পানি উঠে এসেছে।
মধ্যকুল আমতলায় রাস্তাঘেঁষে টংঘরে আশ্রয় নিয়েছেন হামিদা খাতুন (৪০)। তিনি বলেন, ‘এক মাস হলো পানি উঠেছে। গত বৃহস্পতি-শুক্রবারের বৃষ্টিতে ঘরেও পানি ঢুকে গেছে। বাধ্য হয়ে রাস্তায় উঠে এসেছি।’
ভ্যানচালক জিন্নাত আলী বলেন, ‘পরিবার নিয়ে রাস্তার পাশে ঘর তুলছি। অনেকেই এভাবে ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।’
সাবেক কাউন্সিলর আয়ুব খান জানান, জলাবদ্ধ মানুষ সাহায্য চান না, তাঁরা স্থায়ী সমাধান চান।
২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, ‘পলি ও ঘেরে পানি আটকে কেশবপুরের বহু গ্রাম জলাবদ্ধ। নদ-নদী খনন ও টিআরএম চালু না করলে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।’

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অধিকাংশই পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধ পরিবার এখন ৪০০ ছাড়িয়েছে।’
কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে তিন হাজার ২০০ পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, ‘হরিহর নদে বর্তমানে পানি ১০ দশমিক ৭৬ ফুট, যেখানে স্বাভাবিক স্তর ৮ দশমিক ৬৯ ফুট। টানা বৃষ্টিতে নদে পানি বেড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০টি খাল পুনঃখননের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। জানুয়ারি থেকে কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি জানান, হরিহর নদ থেকে আপারভদ্রা পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং আরও ৪ কিলোমিটার খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব খননকাজ শেষ হলে পানি দ্রুত সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।