স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট কী, কেন ফিরিয়ে আনলেন ট্রাম্প


আবার চালু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বহু বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শারীরিক পরীক্ষার প্রথা—প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরীক্ষাটি পুনরায় বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করা এই ফিটনেস টেস্ট এক সময় আমেরিকার স্কুলশিক্ষার নিয়মিত অনুষঙ্গ ছিল। এক মাইল দৌড়, সিট-আপ, পুশ-আপ, এবং স্ট্রেচিংসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক সক্ষমতা নির্ধারণ করা হতো। তবে ২০১২ সালের পর ওবামা প্রশাসনের সময় এটি বাতিল করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও মানসিক সক্ষমতার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
২০১২ সালে এই প্রোগ্রামে পরিবর্তন আনা হয় এবং এটিকে ইউথ ফিটনেস প্রোগ্রাম হিসেবে নতুন করে সাজানো হয়। সেই সময়কার ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তার “লেট’স মুভ” উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুদের স্থূলতা কমানোর ওপর জোর দেন। পুরোনো ওয়েবসাইট অনুসারে, নতুন ইউথ ফিটনেস টেস্টের লক্ষ্য ছিল ‘শিশুদের মধ্যে তুলনা কমিয়ে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সুস্থতার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা।’
ট্রাম্প এই পরীক্ষাকে ‘একটি দুর্দান্ত ঐতিহ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা এটা আবার ফিরিয়ে আনছি। এতে শিশুদের মধ্যে শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি হবে।’
ট্রাম্পের সই করা এই নির্বাহী আদেশে একটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। এই পরিষদের সদস্যরা হবেন বর্তমান ও প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ এবং খেলাধুলার জগতের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
ট্রাম্প জানান, প্রেসিডেন্ট’স কাউন্সিল অন স্পোর্টস, ফিটনেস, এবং নিউট্রিশন নামের এই পরিষদ, কলেজ ক্রীড়া সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কাজ করবে। এই পরিষদে সর্বোচ্চ ৩০ জন সদস্য থাকবেন এবং এটি প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস অ্যাওয়ার্ড-এর মানদণ্ডও তৈরি করবে। এই ফিটনেস টেস্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র।
ঘোষণা অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দেন তার বন্ধু পেশাদার গলফার ব্রাইসন ডিচ্যাম্বো, ক্যানসাস সিটি চিফসের কিকার হ্যারিসন বাটকার, সুইডিশ গলফার অ্যানিকা সোরেনস্টাম এবং ডব্লিউডব্লিউইয়ের প্রধান কন্টেন্ট অফিসার পল ট্রিপল এইচ লেভেস্ক।
এদিকে, এই কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে বিতর্কিত নামও রয়েছে। যেমন, লরেন্স টেলর ২০১১ সালে যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং পরে আরও একটি মামলায় আদালতে দোষ স্বীকার করেন। অন্যদিকে, হ্যারিসন বাটকার তার এক বক্তব্যে নারীদের ক্যারিয়ারের চেয়ে সংসারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
তবে ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব বিতর্ক নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের কাইনসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক লরা রিচার্ডসন বলেন, ট্রাম্প শিশুদের শরীরচর্চার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, এটা ভালো উদ্যোগ। তবে শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্য ভালো হবে না। তার মতে, এই পরীক্ষা হওয়া উচিত এক ধরনের শুরু, যার সঙ্গে এমন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণও থাকতে হবে যার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে নিজের স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করতে পারে।
ট্রাম্প নিজেও একজন তুখোড় গলফ খেলোয়াড় এবং খেলাধুলার জগতের প্রতি তার আকর্ষণ দীর্ঘদিনের। তিনি হাইস্কুলে বেসবল খেলেছেন। এমনকি এখনো প্রায় প্রতি রোববার গলফ খেলেন তিনি। এ বছর তার ব্যক্তিগত সফরের বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে যোগ দেওয়া, যার মধ্যে সুপার বোল, ডেটোনা ৫০০ এবং ইউএফসি ম্যাচ উল্লেখযোগ্য।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সব সময় খেলাধুলা ভালোবাসতাম। খেলাধুলায় আমি ভালো ছিলাম। আপনি যদি খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে অন্য কোনো চিন্তা আপনার মাথায় আসবে না। আপনি কয়েক ঘণ্টার জন্য সবকিছু থেকে দূরে চলে যেতে পারেন।’
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালের রাইডার কাপ, ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০২৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগে ট্রাম্প আরেকটি নির্বাহী আদেশে বলেছিলেন, সরকারকে ঠিক করে বলতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলোয়াড়দের চাকরিজীবী (কর্মচারী) হিসেবে ধরা হবে কি না। অর্থাৎ, তারা খেলার জন্য বেতন বা চাকরির সুবিধা পাবে কি না, সেটা স্পষ্ট করতে হবে।