আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, মেধার লড়াইয়ে ব্রোঞ্জের হাসি


বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে চলেছে বাংলাদেশের মেধাবী কিশোরেরা। এর অনন্য এক উদাহরণ হিসেবে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত ৩৬তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে (আইবিও) অংশ নিয়ে তিনটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে বাংলাদেশ দল। ব্রোঞ্জজয়ী তিন শিক্ষার্থী হলো—সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরিজ আনাস, মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফারাবিদ বিন ফয়সাল এবং নটর ডেম কলেজের হা-মীম রহমান।
তাদের সঙ্গে জাতীয় দলের চতুর্থ সদস্য হিসেবে ছিল রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মারজান আফরোজ। এ ছাড়া পুরো দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রাখহরি সরকার এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু।
এই অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় পদকজয়ী আরিজ আনাস বলে, ‘ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী হিসেবে আমি গর্বিত। বিগত কয়েক বছরের পরিশ্রমই এই সফলতা অর্জনে সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতে চিকিৎসা এবং গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’
আরিজের এই অসাধারণ ফলের পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও একাগ্রতা। তাঁর মা জানান, ‘সে বিগত বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে রেকর্ড ব্রেক স্কোর করেছে। তার এমন সাফল্যে আমরা গর্বিত।’
যেভাবে গঠিত হয় বাংলাদেশ দল
বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির উদ্যোগে এ বছরের শুরুতে দেশের ১০টি আঞ্চলিক উৎসবে অংশ নেয় প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী। ১৬-২৪ মে আয়োজিত এই উৎসবগুলো থেকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় ৩১ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় উৎসবে, যেখানে প্রতিযোগী ছিল ১ হাজার ১৯০ জন।
এরপর নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘জাতীয় আবাসিক বায়োক্যাম্প’। সেখানে চূড়ান্তভাবে চারজনকে বাছাই করা হয় আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার জন্য। গত ১৯ জুন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত বাছাইপর্ব।
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সাফল্য
সারা বিশ্বের ৮১টি দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই তিনটি ব্রোঞ্জ জয় বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক অনন্য অর্জন। এর পেছনে রয়েছে প্রচুর সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু বলেন, ‘এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। আমাদের শিক্ষার্থীরা আর্থিক ও কারিগরি সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও অসাধারণ ফল করেছে। সঠিক প্রশিক্ষণ ও স্পনসর পেলে আমরা আরও ভালো ফল করতে পারতাম। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে এখনো তেমন পৃষ্ঠপোষকতা মেলে না।’
মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু আরও বলেন, ‘সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ধাপে ধাপে বাছাইয়ের পর এই চারজনকে নির্বাচন করা হয়। এরপর তাদের নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিভারই ফল হিসেবে এসেছে এই তিনটি ব্রোঞ্জ পদক। আমরা গর্বিত, তবে চাই আরও এগিয়ে যেতে। এর জন্য সরকারি, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরি।’
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ৩৬তম আসর বসে ২০-২৭ জুলাই, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায়। ২৭ জুলাই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক দিন আগেই ফল ঘোষণা করা হয়।
এর আগে, বাংলাদেশ দল গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে ১০টি আঞ্চলিক উৎসব আয়োজিত হয় ১৬-২৪ মে। এতে প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরপর আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় জাতীয় উৎসব। ৩১ মে জাতীয় উৎসবে অংশ নেয় ১ হাজার ১৯০ জন শিক্ষার্থী। এ পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় জাতীয় আবাসিক বায়োক্যাম্প। সেখান থেকে সেরা চারজনকে বাছাই করা হয়েছে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের জন্য।