৫০ লাখ টাকার সরকারি ক্রয়ে লাগবে না অনুমোদন


সরকারি পণ্য ও সেবা কেনাকাটায় যুগোপযোগী কাঠামো তৈরিতে ১৭ বছর পর সংশোধিত হচ্ছে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর)। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে অনুমোদন ছাড়াই ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনাকাটার সুযোগ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমিত দরপত্র পদ্ধতির (এলটিএম) সীমা ৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
২০০৮ সালে প্রণীত পিপিআর বিধিমালায় এবার মোট ১৩০টি বিধির মধ্যে ৮৮টিতে সংশোধন, ১২টিতে নতুন সংযোজন, ৬৬টিতে শব্দ ও কাঠামোগত পরিবর্তন, ৪টি ও ৯টি উপবিধি বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪টি নতুন তফসিল যুক্ত করা হয়েছে এবং বাতিল করা হয়েছে আরও ৮টি তফসিল।
এই খসড়া সংশোধনীর ওপর জনমত আহ্বান করে সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এবং বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে পিপিআরের সংশোধনী খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি জনমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে।’
আইএমইডি সচিব কামাল উদ্দিন জানান, ‘সংশোধন প্রক্রিয়ার ১১টি ধাপের মধ্যে ৬-৭টি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে জনমত গ্রহণের পর্যায়। এরপর বিভাগীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা হবে। স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে আইনটি সংশোধন বা নতুন নামে প্রণয়ন করা হবে।’
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে প্রকল্পের দর নির্ধারণে। আগে অফিশিয়াল ইস্টিমেশনের তুলনায় ঠিকাদার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কম এবং ১০ শতাংশ বেশি দর দিতে পারতেন। নতুন খসড়ায় এ সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে গণিতভিত্তিক একটি নতুন ছক (ম্যাথমেটিক্যাল ফর্মুলা) সংযোজন করা হয়েছে, যা ১২টি নতুন বিধিতে যুক্ত হয়েছে।
এ ছাড়া পিপিআরের ভাষাগত ও কাঠামোগত বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। ৬৬টি বিধিতে ‘সিপিটিইউ’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিপিপিএ’, ‘টেন্ডার’-এর জায়গায় ‘টেন্ডারস’, ‘অভ্যন্তরীণ’ শব্দ বাদ দেওয়া ইত্যাদি সংযোজন ও সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সংশোধিত পিপিআরে ‘সার্ভিস’ খাতকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে ‘ওয়ার্কস’, ‘গুডস’ ও ‘সার্ভিস’—এই তিন ভাগে প্রকিউরমেন্ট কাঠামো থাকলেও এবার ‘সার্ভিস’ খাতকে ভেঙে ‘ইন্টেলেকচুয়াল সার্ভিস’ এবং ‘ফিজিক্যাল সার্ভিস’ নামে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই পিপিআর সংশোধনের দাবি উঠেছিল। কারণ মূল্যস্ফীতি, ডলার-টাকার বিনিময় হারের পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা, প্রকল্প ব্যয়ের বাস্তবতা—এসব বিষয়ে ২০০৮ সালের কাঠামো অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছিল।
পিপিআর হলো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ক্রয়নীতি। এটি সরকারের পণ্য, কাজ ও সেবা ক্রয়ে স্বচ্ছতা, প্রতিযোগিতা, জবাবদিহি এবং অর্থের সাশ্রয় নিশ্চিত করতে কার্যকর একটি আইনি কাঠামো হিসেবে বিবেচিত।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে দীর্ঘদিন কোনো কেন্দ্রীয় নীতিমালা না থাকায় বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ নিয়মে টেন্ডার দিত, ফলে দুর্নীতি ও অদক্ষতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পিপিআর ছিল সেই অরাজকতা রোধে প্রথম কাঠামোগত উদ্যোগ। সংশোধনের এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নতুন বাস্তবতায় ক্রয়নীতি আরও আধুনিক, বাস্তবভিত্তিক ও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।